চট্টগ্রামে খাল খননের নামে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। তার মতে, গত কয়েক বছরে খাল খনন প্রকল্পের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ লুটপাট করা হয়েছে, অথচ প্রকল্পটি জনগণের জন্য যে কাজ করার উদ্দেশ্যে ছিল, তা সম্পন্ন হয়নি। নগরীর জলাবদ্ধতা সমস্যা আরও বেড়েছে, কারণ শহরের খাল-নালার সংস্কার কাজগুলো এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। এর ফলে প্রতিবছর বর্ষাকালে চট্টগ্রাম শহরটি পানির নিচে চলে যায়, যা নগরবাসীর জন্য এক বড় দুর্ভোগ হয়ে দাঁড়ায়।
অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান এসব অভিযোগ ৩১ জানুয়ারি চট্টগ্রাম নগরীর বহদ্দারহাট বারইপাড়া ও ষোলশহর সুন্নিয়া মাদরাসা খাল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন। তিনি জানান, পানি প্রবাহের সুষ্ঠু ব্যবস্থা না থাকায় চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান এখনো পুরোপুরি হয়নি। তিনি আরও বলেন, “প্রতি বছর চট্টগ্রাম নগরী পানির নিচে চলে যায়, তবে এবার আগের মতো ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে না।” তবে পুরোপুরি সমস্যা সমাধান করতে আরও সময় প্রয়োজন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, বর্তমানে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব নেই এবং সবাই একসঙ্গে কাজ করছে। এ মৌসুমে জলাবদ্ধতার অবস্থা আগের চেয়ে ৪০-৫০ শতাংশ উন্নতি হবে বলে আশা করছেন তিনি। তবে পুরো প্রকল্পের সুফল পেতে আরও এক বছর সময় লাগবে। এর আগেও তিনজন উপদেষ্টা জলাবদ্ধতা নিরসনের প্রকল্প পরিদর্শন করেছেন, কিন্তু এখনো কার্যকর ফলাফল আসেনি। তবে, এবার সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে সমস্যার সমাধানে কাজ চলছে, তিনি আশাবাদী।
চসিক সূত্র জানায়, নগরীর বহদ্দারহাটের বারইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত ২.৯৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ৬৫ ফুট প্রশস্ত নতুন খাল খননের দায়িত্ব নেয় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। ২০১২ সালে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকা, যেমন নাসিরাবাদ, মুরাদপুর, শুলকবহর, বহদ্দারহাট, বারইপাড়া ও বাকলিয়া এলাকায় জলাবদ্ধতা দূর করতে এ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল। ২০১৪ সালে একনেক সভায় প্রকল্পটি অনুমোদিত হয় এবং প্রথমে ২৮৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়, কিন্তু প্রকল্পের মেয়াদ বারবার বাড়ানোর কারণে ব্যয় বেড়ে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৬২ কোটি টাকায়।
তবে এই প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ করা সম্ভব হয়নি। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও কাজ অসম্পূর্ণ রয়েছে। গত ১৯ জানুয়ারি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচ্চপর্যায়ের মনিটরিং টিম চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের অগ্রগতি পরিদর্শন করে। তারা ১১ দফা কর্মপরিকল্পনা উপস্থাপন করেছেন, যা আগামী মে মাসের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।
চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে বহু বছর ধরে নানা প্রকল্প হাতে নেওয়া হলেও দীর্ঘসূত্রিতা এবং অনিয়মের কারণে এখনো সমস্যার সমাধান হয়নি। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, খাল খননের নামে দুর্নীতি ও বিপুল অর্থ লুটপাটের অভিযোগের তদন্ত করে প্রকল্পের কার্যকারিতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। নাগরিকদের সমস্যা সমাধান করতে হলে, প্রকল্পগুলোর কার্যকর বাস্তবায়ন এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা অপরিহার্য।