Saturday, April 19, 2025
spot_imgspot_img
Homeবাণিজ্যদেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (জিডিপি) হিসাব ১০০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছানোর অনুমান করা...

দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (জিডিপি) হিসাব ১০০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছানোর অনুমান করা হলেও, এটি অতিরঞ্জিত হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশের জিডিপির হিসাব নির্ধারণ করা অনেকটাই জটিল একটি প্রক্রিয়া। জিডিপি নির্ধারণের সময় মূল্যস্ফীতি, বিনিময় হার, মাথাপিছু আয়, জনসংখ্যা, এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সূচকগুলির বিষয়টি মাথায় রাখতে হয়। তবে, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)-এর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশের জিডিপির পরিমাণ ৪৫৯ বিলিয়ন ডলার হিসেবে দেখানো হলেও, অনেক অর্থনীতিবিদ এবং বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রকৃত জিডিপি ৩০০ থেকে ৩৫০ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে হতে পারে। এর পেছনে একটি বড় কারণ হলো দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সঠিক পরিমাপ না করা এবং সরকারের পক্ষ থেকে ভুল বা অতিরঞ্জিত পরিসংখ্যান প্রকাশ করা।

এমন ধারণা রয়েছে যে, বাংলাদেশের জিডিপি আকার বড় করে দেখানোর ফলে সরকারের কাছে বিদেশী ঋণ নেওয়া সহজ হয়েছে এবং ঋণ-জিডিপি অনুপাত কম মনে হয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে এই প্রক্রিয়ায় অনেক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে বিশ্বের বড় অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান যেমন বিশ্বব্যাংক, এডিবি, ইত্যাদি বাংলাদেশের জিডিপি হিসাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এসব প্রতিষ্ঠান তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে যে, সরকারের প্রাপ্ত তথ্য সঠিক নয় এবং অনেক ক্ষেত্রে পরিসংখ্যানকে অতিরঞ্জিত করা হয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের ২০২২ সালের প্রতিবেদনে, ২০০৯ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত বাংলাদেশের জিডিপির গড় প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ দেখানো হলেও, প্রকৃত প্রবৃদ্ধি ছিল ৪.২ শতাংশ। অর্থাৎ, ২.৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে, যা দেশের বাস্তব অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি এসব অতিরঞ্জিত পরিসংখ্যান বাদ দেওয়া হয়, তবে দেশের জিডিপি আকার দাঁড়াতে পারে ৩২২ বিলিয়ন ডলারে, যা সরকারের ঘোষিত ৪৫৯ বিলিয়ন ডলারের থেকে অনেক কম।

এর ফলে দেশের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা এবং অর্থনৈতিক সূচকগুলোর প্রকৃত মূল্যায়ন নিয়ে বড় ধরনের বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, যদি বাংলাদেশের প্রকৃত জিডিপি ৩৫০ বিলিয়ন ডলার হয়, তবে ঋণ-জিডিপি অনুপাত প্রায় ২৯.৬৫ শতাংশ হবে, যা সরকারের ঘোষণা করা ২২.৬৫ শতাংশের চেয়ে অনেক বেশি। এছাড়াও, মাথাপিছু জিডিপি হিসাবেও পরিবর্তন আসবে। বর্তমান সরকারি হিসাব অনুসারে, মাথাপিছু আয় ২,৬৭৫ ডলার হলেও, প্রকৃত হিসাব অনুযায়ী এটি প্রায় ২,৪০০ ডলার হতে পারে।

এ ছাড়া, বাংলাদেশের জিডিপি এবং প্রবৃদ্ধি নিয়ে সরকারের হিসাবেও বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা গেছে। সিটি ব্যাংক ক্যাপিটাল রিসোর্সেসের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শেষে বাংলাদেশের প্রকৃত জিডিপি ছিল প্রায় ৩০০ বিলিয়ন ডলার, যা সরকারের প্রকাশিত পরিসংখ্যানের সঙ্গে মেলে না। এ ধরনের পরিসংখ্যানের কারণে দেশের অর্থনীতির প্রকৃত পরিস্থিতি বোঝা কঠিন হয়ে পড়ে, এবং আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাংলাদেশে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধি নিয়ে যে দাবি করা হয়েছে, তা সঠিক নয়।

বর্তমানে, জিডিপির প্রকৃত পরিমাণ নিরূপণ করার জন্য বাংলাদেশের সরকার এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কাছে জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সঠিক পরিসংখ্যানের জন্য একটি নিরপেক্ষ পরিসংখ্যান কমিশন গঠন করা উচিত এবং সরকারি পরিসংখ্যানের স্বচ্ছতা ও সঠিকতা নিশ্চিত করতে হবে। এটি দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা এবং নীতি নির্ধারণে সহায়ক হবে এবং বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

Most Popular

Recent Comments