Saturday, April 19, 2025
spot_imgspot_img
Homeরাজনীতি"শেখ হাসিনার প্রভাব ব্যবহার করে ১০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ...

“শেখ হাসিনার প্রভাব ব্যবহার করে ১০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে নাসা নজরুলের বিরুদ্ধে।

রাজনৈতিক প্রভাবের মাধ্যমে বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে নজরুল ইসলাম মজুমদারের ভূমিকা এবং তার ঋণখেলাপির ঘটনাটি ব্যাংকিং খাতের ইতিহাসে একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার নাসা গ্রুপের কর্ণধার হিসেবে নেওয়া বিশাল পরিমাণ ঋণ এবং তার পরবর্তী ঋণখেলাপি হওয়ার ঘটনা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে গুরুতর সমস্যায় ফেলেছে। নজরুল ইসলাম মজুমদারের ঋণগ্রহণের পেছনে তার রাজনৈতিক প্রভাব এবং সরকারি সংস্থা থেকে বিশেষ সুবিধা নেওয়ার বিষয়টি বিশেষভাবে আলোচিত হয়েছে। রাজনৈতিক ক্ষমতার মাধ্যমে ব্যাংক খাত থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ সংগ্রহ করার ঘটনা কেবলমাত্র একটি ব্যাংকিং কেলেঙ্কারি নয়, বরং এটি দেশের অর্থনীতির জন্য একটি মারাত্মক বিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

নাসা গ্রুপের কর্ণধার নজরুল ইসলাম মজুমদার ২২টি ব্যাংক ও ১টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে মোট ১০ হাজার ৩০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। এসব ঋণ নাসা গ্রুপ এবং তার সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোর নামে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ঋণ খেলাপি হয়ে গেছে এবং অবশিষ্ট ঋণও সেই পথে এগোচ্ছে। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক থেকে ৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে, যা বর্তমানে মুনাফাসহ অনেক বেড়ে গেছে এবং কিছু অংশ এখন খেলাপি হয়ে গেছে। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক থেকে প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছিল এবং সেগুলোর বেশিরভাগই এখন খেলাপি। এমনকি গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক থেকেও নেওয়া ২৬৫ কোটি টাকার ঋণও বেনামি ঋণ হিসেবে চলে গেছে, যা পুনঃতফশিল করা হয়েছে এবং বর্তমানে নিয়মিত দেখানো হচ্ছে।

বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নেওয়া এসব ঋণ, যেগুলোর বেশিরভাগই খেলাপি হয়ে গেছে, তা প্রমাণ করে যে নজরুল ইসলাম মজুমদার রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে ব্যাংক খাতে বিশাল ঋণগ্রহণ করেছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, তার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সম্পর্ক এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা ছিল, যা তিনি ব্যাংক খাতে এসব ঋণ গ্রহণে ব্যবহার করেছেন। তিনি বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) এবং এক্সিম ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যানও ছিলেন। এর মাধ্যমে তিনি ব্যাংকগুলোর ওপর তার প্রভাব খাটিয়ে ঋণ গ্রহণ করেছেন।

বিশ্বস্ত সূত্র থেকে জানা গেছে যে, নজরুল ইসলাম মজুমদার বিভিন্ন ব্যাংক থেকে চাঁদা তোলার জন্য একাধিকবার শীর্ষ রাজনৈতিক নেতাদের সাহায্য নিয়েছেন। তিনি শেখ হাসিনার জন্য নানা অনুষ্ঠানে অর্থ সংগ্রহ করতেন, যা কখনো মুজিববর্ষ, কখনো শেখ হাসিনার জন্মদিন, আবার কখনো শেখ রাসেল বা শেখ কামালের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে চাঁদা তোলার মাধ্যমে ঘটেছিল। ব্যাংক খাতে আন্তঃব্যাংক ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজনেও তিনি চাঁদা তুলতেন এবং সে সময়ে শেখ হাসিনা নিজেই উপস্থিত থাকতেন। এসব কারণে ব্যাংক খাতে তার ভূমিকা সন্দেহজনক হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং তাকে ব্যাংক খাতের চাঁদাবাজ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

নজরুল ইসলাম মজুমদারের ঋণখেলাপি হওয়ার ঘটনা একদিকে ব্যাংক খাতের জন্য একটি বড় ধাক্কা, অন্যদিকে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটি বড় সংকট সৃষ্টি করেছে। বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণগুলো সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে বিশেষ সুবিধা নিয়েই অনুমোদিত হয়েছে। এসব ঋণ শুধুমাত্র তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য নয়, বরং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার হয়েছিল। যেমন, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক থেকে নেওয়া প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার ঋণ এবং ইসলামী ব্যাংক থেকে নেওয়া প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার ঋণ এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহৃত হয়েছে। এসব ঋণের বড় অংশেরই কোনো সুদ পরিশোধ হয়নি এবং এখন সেগুলো খেলাপি হয়ে গেছে।

ব্যাংক খাতে তার এই বিশাল ঋণগ্রহণের ফলে অন্যান্য ব্যাংকগুলোর সিএসআর (করপোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটি) ফান্ডের ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে এবং তারা চাপে পড়েছে। মজুমদারের এই ঋণগ্রহণের পেছনে আরও একটি বড় বিষয় রয়েছে, তা হলো- তিনি বিদেশে অর্থ পাচারের জন্যও ব্যাংকগুলোর সুবিধা নিয়েছেন। বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নেওয়া বিপুল পরিমাণ ঋণ বিদেশে নিজের কোম্পানি খুলে অর্থ পাচারের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়েছে। এতে দেশের অর্থনীতি একদিকে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তেমনি বিদেশে তার পরিবার এবং তার ব্যবসার লাভ হয়েছে।

এছাড়া ইসলামী ব্যাংক থেকে নেওয়া প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা ঋণ, যা বিশেষ বিবেচনায় দেওয়া হয়েছিল, তা ছিল সরকারি প্রভাব এবং রাজনৈতিক সম্পর্কের প্রভাবিত। এমনকি ব্যাংকটির লোকাল অফিস থেকেও এ ঋণ অনুমোদিত হয়েছিল। এসব ঋণ আবার পরে বিশেষ বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে, যা সরকারের জন্য একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমান সময়ে এসব ঋণের অধিকাংশই খেলাপি হয়ে গেছে এবং তা ব্যাংকিং খাতের জন্য একটি সংকট সৃষ্টি করেছে।

নজরুল ইসলাম মজুমদারের ঋণখেলাপির পরিমাণ এবং তার নানা অপকর্মের জন্য বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান তাকে দায়ী করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এবং অন্যান্য ব্যাঙ্কগুলোর প্রতিবেদনে তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ওঠেছে এবং তাকে ঋণখেলাপির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই ঘটনা বাংলাদেশ ব্যাংকের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং ব্যাংক খাতে আরও শৃঙ্খলা আনতে সরকারি উদ্যোগের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।

সবশেষে বলা যায়, নজরুল ইসলাম মজুমদারের ঋণখেলাপি হওয়ার ঘটনা শুধুমাত্র একটি ব্যক্তিগত বা একটি প্রতিষ্ঠানের সমস্যা নয়, বরং এটি দেশের ব্যাংকিং খাতের জন্য এক গুরুতর সংকট সৃষ্টি করেছে। তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ, বিশেষ সুবিধা নেওয়ার ঘটনা, চাঁদাবাজি এবং বিদেশে অর্থ পাচারের বিষয়ে কার্যকর তদন্ত এবং সঠিক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন রয়েছে, যাতে দেশের ব্যাংকিং খাতের শৃঙ্খলা পুনঃস্থাপন করা যায় এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা এড়ানো যায়।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

Most Popular

Recent Comments