ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেছেন, আওয়ামী লীগের কিছু নেতা যারা দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন, তারা বর্তমানে ভারতে বসে বিভিন্ন মিটিং আয়োজন করে বাংলাদেশের পরিবেশ নষ্ট করার পরিকল্পনা করছে। তিনি বলেন, এসব ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তারা দেশের উন্নতি এবং শান্তির পরিবেশকে বিপর্যস্ত করার চেষ্টা করছে। তার মতে, দেশের রাজনৈতিক দলগুলো এবং দেশপ্রেমিক জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এসব ফ্যাসিস্ট শক্তির মোকাবিলা করতে হবে। তিনি সকলকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, তাদের কর্মকাণ্ডে কোনো ঘাটতি রাখা চলবে না।
এ মন্তব্যগুলো তিনি রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) ভোলা জেলা শহরের বাংলাস্কুল মাঠে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ভোলা জেলা উত্তর শাখার দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দিয়েছেন। তার বক্তৃতায়, মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং সরকারের শাসনব্যবস্থার সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের শাসনামলে দেশব্যাপী একদলীয় শাসন এবং ব্যক্তিস্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে জনগণের স্বার্থ নষ্ট করা হয়েছে। এর ফলে দেশের সব জায়গায় দলীয়করণের মাধ্যমে শোষণ-বঞ্চনা চলছে, যা ভবিষ্যতে দেশের কল্যাণের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
এছাড়া ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দল গঠন সম্পর্কে তিনি বলেন, রাজনীতি করার সাংবিধানিক অধিকার সকলের রয়েছে এবং ছাত্ররা যদি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করতে চায়, তাতে কোনো সমস্যা নেই। তিনি বলেন, কোনো ব্যক্তি বা দল যদি জনগণের সমর্থন নিয়ে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করে, তবে সেটি তাদের অধিকার। তবে তিনি এটিও উল্লেখ করেন যে, ইসলামী দলগুলো আগামী নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে এবং ইসলামের পক্ষে একত্রিত হয়ে কাজ করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
এছাড়া ইসলামী দলগুলোর মধ্যে জোট গঠনের বিষয়ে মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ইসলামী দলগুলো একটি সম্মিলিত জোট গঠন করে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে এবং তারা ইসলামিক মূল্যবোধের পক্ষে একটি শক্তিশালী প্যাকেজ তৈরি করবে। তিনি বলেন, ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ তাদের এই জোট গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করছে এবং তারা আশা করছে যে, এই জোট ইসলামিক রাজনৈতিক শক্তির জন্য একটি বড় ভূমিকা পালন করবে।
ভবিষ্যতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ অন্য কোনো রাজনৈতিক দলে জোট করার বিষয়ে তিনি বলেন, এটি এখনো তাদের চিন্তা-ভাবনা হয়নি, তবে সময় ও পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে তারা বিষয়টি পর্যালোচনা করবে। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে, তারা রাজনৈতিক চেতনা ও ইসলামের সঠিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করতে চান এবং এর জন্যই তারা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ গঠন করেছেন।
নির্বাচন ও সংস্কার প্রসঙ্গে মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, আগামী নির্বাচনে একটি সুন্দর পরিবেশ তৈরি করার জন্য তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কাজ করছেন, বিশেষত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানের সঙ্গে। তিনি উল্লেখ করেন যে, বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকার দেশের শাসনব্যবস্থাকে দলীয়করণের মাধ্যমে ব্যক্তিস্বার্থের প্রতি অধিক গুরুত্ব দেয়, যার ফলে দেশ এক অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে রয়েছে। তিনি মনে করেন যে, যতক্ষণ না দেশটির গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোর সংস্কার করা হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত একটি সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য একটি নতুন ব্যবস্থা প্রয়োজন, যেখানে রাজনৈতিক দলগুলো এবং জনগণের স্বার্থ সঠিকভাবে বিবেচিত হবে। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনী পদ্ধতিতে একটি বড় পরিবর্তন আসা দরকার, বিশেষত প্রমিনেন্ট সিস্টেম বা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে দেশের প্রতিনিধিত্ব আরো সঠিকভাবে হবে। এটি জাতীয় সরকার গঠনের পথও খুলে দিতে পারে।
সম্মেলনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ভোলা জেলা উত্তরের সভাপতি মাওলানা আতাউর রহমান মোমতাজীর সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারি মাওলানা তরিকুল ইসলাম তারেকের সঞ্চালনায় প্রধান বক্তা হিসেবে ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ গাজী আতাউর রহমান বক্তব্য দেন। এ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক উপাধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজুল ইসলাম, জেলা ও উপজেলার নেতৃবৃন্দ এবং হাজারো নেতা-কর্মী।
সম্মেলনে আগামী দুই বছরের জন্য ভোলা জেলা উত্তরের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে, যেখানে পুনরায় মাওলানা আতাউর রহমান মোমতাজীকে সভাপতি, মাওলানা ওবায়েদ বিন মোস্তফাকে সহ-সভাপতি এবং মাওলানা তরিকুল ইসলাম তারেককে সেক্রেটারি হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছে।