ভারতের বাধায় ১০ বছরেও চালু হয়নি সিলেটের রহিমপুর পাম্প হাউজ, ক্ষতির মুখে দুই লাখ কৃষক
সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)-এর বাধায় শত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ‘রহিমপুর পাম্প হাউজ’ গত ১০ বছরেও চালু করা সম্ভব হয়নি। এতে পাঁচ উপজেলার দুই লাখেরও বেশি কৃষক মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
পাম্প হাউজ নির্মাণের পেছনের গল্প
জকিগঞ্জসহ আশপাশের পাঁচ উপজেলার লক্ষাধিক হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা নিশ্চিত করতে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ‘আপার সুরমা-কুশিয়ারা’ প্রকল্পের আওতায় রহিমপুর পাম্প হাউজ নির্মাণ করে। ২০১০ সালে প্রকল্পটি শুরু হয়ে ২০১৬ সালে সম্পন্ন হয়। এতে ব্যয় হয় ১০০ কোটিরও বেশি টাকা।
ভারতের বাধায় বাঁধ অপসারণ বন্ধ, চাষাবাদে বিপর্যয়
পাম্প হাউজ চালুর জন্য খালের মুখে নির্মিত ‘ক্রস বাঁধ’ অপসারণ করতে গেলেই ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (BSF) বাধা দেয়। কুশিয়ারা নদীর মাঝ বরাবর থাকা আন্তর্জাতিক সীমান্তরেখার কারণে ভারতের অনুমতি ছাড়া বাঁধ অপসারণ সম্ভব হয়নি।
এই কারণে প্রতিবছর লক্ষাধিক হেক্টর জমিতে সেচের অভাবে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। কৃষকদের দাবি, আগে খালে কিছুটা পানি আসত, যা দিয়ে সীমিত পরিসরে কৃষিকাজ চলত। কিন্তু ক্রস বাঁধ নির্মাণের পর খালের পানি প্রবাহ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে, ফলে কৃষকদের ক্ষতির পরিমাণ বেড়েছে।
কৃষকদের ক্ষোভ ও হতাশা
আমলসীদ গ্রামের কৃষক আবদুল কাইয়ুম সিদ্দিকী ও সাদিকুর রহমান বলেন, “আগে কিছু হলেও পানি পাওয়া যেত, কিন্তু এখন একেবারে বন্ধ। পাম্প হাউজ নির্মাণের আশায় এত বছর অপেক্ষা করলাম, এখন দেখি সেটাও চালু হচ্ছে না!”
জকিগঞ্জের ৭ নম্বর বারঠাকুরী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মহসিন মর্তুজা চৌধুরী বলেন, “বিএসএফের বাধার কারণে বছরের পর বছর পেরিয়ে যাচ্ছে, অথচ কোনো সমাধান হচ্ছে না। সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।”
পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিজিবির অবস্থান
পানি উন্নয়ন বোর্ডের জকিগঞ্জের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. মাহফুজুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, “বাংলাদেশ-ভারত সমঝোতা চুক্তি থাকলেও বিএসএফের বাধায় এখনো বাঁধ অপসারণ সম্ভব হয়নি। তবে দ্রুত সমাধানের চেষ্টা চলছে।”
অন্যদিকে, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) জানিয়েছে, এটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিষয় এবং সমাধানের দায়িত্ব তাদের।
সম্ভাব্য সমাধান ও কৃষকদের দাবি
বাংলাদেশ-ভারত চুক্তির আওতায় সমাধান করা।
বাঁধ অপসারণ করে পাম্প হাউজ চালু করা।
শুষ্ক মৌসুমে চাষাবাদের জন্য পানি প্রবাহ নিশ্চিত করা।
কেন এই প্রতিবেদন গুরুত্বপূর্ণ?
শত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত প্রকল্প ১০ বছরেও চালু হয়নি।
দুই লাখের বেশি কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত।
সেচ সুবিধা না থাকায় হাজার হাজার হেক্টর জমি অনাবাদি রয়ে গেছে।
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত সমস্যা নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন