গাজার যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী, ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে পাঁচ দফায় জিম্মি ও বন্দি বিনিময় হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এই বিনিময়ের মাধ্যমে ইসরায়েলি জিম্মির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮, এবং ৫৫০ ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তি পেয়েছেন। গত শনিবার কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
হামাস সম্প্রতি তিন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে, এবং ইসরায়েলি কারাগার থেকে ১৮৩ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দিরা অধিকৃত পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম এবং গাজায় ফেরত গেছেন। তবে, দ্বিতীয় পর্যায়ের যুদ্ধবিরতির আলোচনার ভবিষ্যত একেবারেই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজার দখল নেওয়ার প্রস্তাবের পর এই চুক্তির সফল বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
ট্রাম্পের প্রস্তাব অনুসারে, গাজার ফিলিস্তিনি বাসিন্দাদের অন্য কোনো জায়গায় সরিয়ে গাজার নিয়ন্ত্রণ নিতে চায় ইসরায়েল। যদিও পরবর্তীতে মার্কিন প্রশাসন কিছুটা এই অবস্থান থেকে পিছিয়ে এসেছে, তবুও সংশ্লিষ্টরা মনে করেন যে, এই অবস্থানের কারণে চুক্তির সম্ভাবনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৫৫৫ বন্দি মুক্তির ফলে এই পরিস্থিতির মধ্যেও কিছুটা আশার আলো দেখা গেছে, তবে দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনায় এর প্রভাব খুবই গভীর হতে পারে।
শনিবার সকালে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে হামাস তিন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেয়। মুক্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে ছিলেন এলি শারাবি (৫২), ওর লেভি (৩৪) এবং ওহাদ বেন আমি (৫৬)। তাদের মুক্তির সনদ হাতে ধরে মঞ্চে উপস্থাপন করা হয়, যেখানে হামাসের সশস্ত্র সংগঠন আল কাসাম ব্রিগেডের যোদ্ধারা তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছিল। অনুষ্ঠানে উপস্থিত জনতা হামাসের প্রতি সমর্থন জানিয়ে শ্লোগান দিতে থাকে।
মুক্তিপ্রাপ্ত ৫৫০ ফিলিস্তিনির মধ্যে বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ হামাস সদস্যও ছিলেন। এর মধ্যে ছিলেন ইয়াদ আবু শাখদাম (৪৯), যিনি প্রায় ২১ বছর ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি ছিলেন। অন্যদিকে, পশ্চিম তীরের হামাস নেতা জামাল আল-তাউইলও প্রায় ২০ বছর ধরে ইসরায়েলি কারাগারে ছিলেন।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমে অভিযোগ উঠেছে যে, মুক্তি পাওয়া তিন ইসরায়েলি জিম্মিকে দুর্বল অবস্থায় দেখা গেছে। ইসরায়েলি সংগঠন হোস্টেজেস অ্যান্ড মিসিং ফ্যামিলিস ফোরাম এ বিষয়টিকে উদ্বেগজনক হিসেবে অভিহিত করেছে এবং দ্রুত বাকি জিম্মিদের মুক্তি দাবি করেছে। তবে, প্রথম পর্যায়ের যুদ্ধবিরতির পরে মোট ৩৩ ইসরায়েলি জিম্মি ও প্রায় ২ হাজার ফিলিস্তিনি মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু ট্রাম্পের সাম্প্রতিক প্রস্তাবের কারণে দ্বিতীয় পর্যায়ের বাস্তবায়ন নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
কাতার, মিশর এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা শুরু হলেও, এখন পর্যন্ত কোন বড় অগ্রগতি হয়নি। হামাসের পক্ষ থেকে গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের দাবি এবং স্থায়ী যুদ্ধবিরতির রোডম্যাপ নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে, তবে ইসরায়েলি প্রশাসন বদ্ধপরিকর যে, তারা হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাবে।
এদিকে, গাজার যুদ্ধের কারণে ইতোমধ্যে ৬১ হাজার ৭০৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ১৪ হাজার ২২২ জন নিখোঁজ, যা সম্ভবত নিহত হয়েছেন। যুদ্ধবিরতির চুক্তি যদি না হয়, তবে মার্চ মাসে আবারও ইসরায়েলি হামলা শুরুর আশঙ্কা রয়েছে। এর ফলস্বরূপ গাজার ফিলিস্তিনিদের আরও ক্ষতি হতে পারে এবং নতুন সহিংসতা শুরু হতে পারে।