দেশব্যাপী অস্থিরতার নেপথ্যে কামাল সিন্ডিকেটের ১৮ কর্মকর্তা
বাংলাদেশে চলমান সহিংসতার পেছনে রয়েছে আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সম্প্রতি টুঙ্গিপাড়ায় পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে আসামি ছিনতাইয়ের চেষ্টা এবং বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের ওপর হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে দেশত্যাগ করলেও তার অনুসারী কর্মকর্তারা এখনো গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল রয়েছেন, যা অস্থিরতার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিশেষ করে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল সিন্ডিকেটের ১৮ কর্মকর্তা এবং শেখ হাসিনার আস্থাভাজন পুলিশের কিছু উচ্চপদস্থ সদস্যের মাধ্যমে এখনো আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটছে। অভিযোগ রয়েছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা কর্মকর্তারা এখনো শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়া বিশ্বস্ত সহযোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন এবং রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাচার করছেন।
কামাল সিন্ডিকেটের ক্ষমতা ও দুর্নীতি
স্বৈরাচারী শাসনামলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হয়ে ওঠে আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণাধীন এক অভয়ারণ্য। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পদায়ন নিয়ন্ত্রণ করত তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও অতিরিক্ত সচিব ড. হারুন অর রশীদ বিশ্বাসের সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য ছিলেন যুগ্মসচিব ধনঞ্জয় কুমার দাস, যিনি দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে বিপুল অর্থের মালিক হয়েছেন।
সরকারি একটি গোপন প্রতিবেদনে ধনঞ্জয় দাস সম্পর্কে বলা হয়েছে, তিনি চরম দুর্নীতিগ্রস্ত এবং পুলিশের নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্যের মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। তার নেতৃত্বে অনেক কর্মকর্তাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পদায়ন করা হয়েছে শুধুমাত্র রাজনৈতিক পরিচয়ের ভিত্তিতে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বহাল কর্মকর্তাদের তালিকা
পর্যালোচনায় উঠে এসেছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শাখায় এখনো আছেন কামাল সিন্ডিকেটের সদস্যরা। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
শেখ ছালে আহম্মদ – যুগ্মসচিব, সীমান্ত অধিশাখা
নাসরিন পারভীন – উপসচিব, জননিরাপত্তা বিভাগ
বিকাশ বিশ্বাস – যুগ্মসচিব, জননিরাপত্তা বিভাগ
আমিনুল ইসলাম – উপসচিব, শৃঙ্খলা-২ শাখা
সেখ ফরিদ আহমেদ – যুগ্মসচিব, অগ্নি শাখা
শরিফা আহমেদ – যুগ্মসচিব, নিরাপত্তা শাখা
ফারুক আহম্মদ – যুগ্মসচিব
ফয়সাল আহমেদ – অতিরিক্ত সচিব, উন্নয়ন শাখা
তৌফিক-ইলাহি চৌধুরী – যুগ্মসচিব, বহিরাগমন-৩ শাখা
আশরাফ আহমেদ রাসেল – উপসচিব, প্রশাসন-১ শাখা
শহীদ উল্লাহ – উপসচিব, প্রশাসন-৩ শাখা
কামরুজ্জামান – উপসচিব, বহিরাগমন-১ শাখা
আবু সাঈদ মোল্লা – উপসচিব, কারা-২ শাখা
কানিজ ফাতেমা – উপসচিব, বহিরাগমন-৫ শাখা
ফারজানা সিদ্দীকা – উপসচিব, নিরাপত্তা-৩ শাখা
তাহনিয়া রহমান চৌধুরী – উপসচিব, কারা-১ শাখা
আমিন আল পারভেজ – উপসচিব, বহিরাগমন-৪ শাখা
দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ করণীয়
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শেখ হাসিনার অনুগত এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা এখনো দেশবিরোধী কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছেন এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও অবনতি ঘটবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানান, “আমরা সবকিছু বিবেচনা করছি এবং সময়মতো যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
দেশের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এবং সুশাসন নিশ্চিত করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিতর্কিত কর্মকর্তাদের অপসারণ ও তদন্তের আওতায় আনার দাবি তুলছেন বিশ্লেষকরা