Monday, July 7, 2025
spot_imgspot_img
Homeজাতীয়নির্বাচন পদ্ধতির ব্যাপারে স্পষ্ট কোনো সুপারিশ নেই।

নির্বাচন পদ্ধতির ব্যাপারে স্পষ্ট কোনো সুপারিশ নেই।

বাংলাদেশে আগামী নির্বাচনের পদ্ধতি বিষয়ে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন সুনির্দিষ্ট কোনো সুপারিশ বা প্রস্তাব দেয়নি। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে মতৈক্য না হওয়ায় কমিশন তাদের প্রতিবেদনটি রাজনীতিবিদদের ওপর ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত শনিবার সরকার পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনটি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে, যা ১৮৪ পৃষ্ঠার। এই প্রতিবেদনে নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কারের জন্য নানা প্রস্তাব রয়েছে, তবে নির্বাচন পদ্ধতি পরিবর্তন নিয়ে কোনো নির্দিষ্ট সুপারিশ করা হয়নি।

কমিশন তাদের প্রতিবেদনে উল্লিখন করেছে যে, বর্তমান নির্বাচন পদ্ধতি, ফাস্ট পাস্ট দ্য পোস্ট (এফপিটিপি), যদিও সহজ এবং জনপ্রিয়, তবুও এই পদ্ধতিতে কিছু গুরুতর সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো, এই পদ্ধতিতে রাজনৈতিক দলগুলি তাদের প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে আসন না পেয়ে থাকে। অর্থাৎ, যে দল বেশি ভোট পায়, সেই দল অনেক সময় কম আসন পায়, ফলে সংসদে দলগুলোর প্রতিনিধিত্ব সঠিকভাবে প্রতিফলিত হয় না। এছাড়া এই পদ্ধতির মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা দলগুলো সাধারণত তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার সুবিধা নিয়ে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা করে, যা গণতন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

আরেকটি পদ্ধতি, সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি, যেখানে আসনগুলো রাজনৈতিক দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের হারে ভাগ করা হয়, তার সুফল এবং কুফলও আলোচনা করা হয়েছে। এই পদ্ধতিতে, ভোটাররা রাজনৈতিক দলকে ভোট দেয়, প্রার্থীকে নয়, এবং দলগুলোর আসন সংখ্যা তাদের প্রাপ্ত ভোটের হার অনুসারে নির্ধারিত হয়। এতে সংসদে রাজনৈতিক দলের বাস্তব প্রতিনিধিত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, ৫ম এবং ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে, যদি সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি থাকত, তবে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির আসন সংখ্যা প্রায় সমান হতো, যা সরকার গঠনে কোনো একক দলের পক্ষে সম্ভব ছিল না। তবে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির একটি দুর্বলতা হলো, এটি সরকারকে অস্থিতিশীল করে ফেলতে পারে, কারণ একাধিক দলকে মিলে সরকার গঠন করতে হয় এবং এতে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে।

এমন পরিস্থিতিতে কমিশন নির্বাচন পদ্ধতি পরিবর্তন করার বিষয়ে কোনো সুপারিশ করতে পারেনি, কারণ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তীব্র মতবিরোধ রয়েছে। সুতরাং, এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্ব রাজনীতিবিদদের ওপর ছেড়ে দেওয়াই সবচেয়ে যুক্তিযুক্ত বলে কমিশন মনে করেছে।

তবে কমিশন রান-অফ নির্বাচন পদ্ধতির প্রস্তাব করেছে, যা দুটি ধরনের হতে পারে। একটি হলো নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ওপর ভিত্তি করে, যেখানে বিজয়ী প্রার্থীকে ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পেতে হয়, আর যদি কেউ তা না পায়, তবে সর্বোচ্চ ভোটপ্রাপ্ত দুই প্রার্থীর মধ্যে পুনরায় ভোট হয়। অন্যটি হলো সিম্পল বা সহজ রান-অফ পদ্ধতি, যেখানে নির্দিষ্ট শতাংশ ভোট না পাওয়া প্রার্থীদের মধ্যে নির্বাচন আবার অনুষ্ঠিত হয়।

এছাড়া, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ধারা ৩৭ক সংশোধন করে ভোটের ৪০ শতাংশের কম ভোট পড়লে নির্বাচন বাতিলের সুপারিশও কমিশন করেছে। এই বিধান উপনির্বাচনে প্রযোজ্য হবে না।

বিগত নির্বাচন কমিশন (আউয়াল কমিশন) কিছু বিতর্কিত দলকে নিবন্ধন দেয়ার পর, সংস্কার কমিশন তাদের নিবন্ধন বাতিল করার সুপারিশ করেছে, যা সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থার জন্য প্রয়োজনীয় বলে তারা মনে করছে।

সর্বশেষে, নির্বাচন পদ্ধতি সংস্কারের জন্য রাজনৈতিক ঐকমত্যের অভাব নিয়ে কমিশন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত উন্নতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

Most Popular

Recent Comments