বাংলাদেশে প্রাদেশিক সরকার: সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ
সম্প্রতি জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন চারটি প্রদেশ গঠনের পাশাপাশি একটি ‘ক্যাপিটাল সিটি গভর্নমেন্ট’ প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করেছে। এর মূল যুক্তি হলো ঢাকাকেন্দ্রিক জনসংখ্যার চাপ ও কেন্দ্রীয় সরকারের কার্যপরিধি বৃদ্ধি, যা বিদ্যমান প্রশাসনিক কাঠামোকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।
বাংলাদেশে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের প্রয়োজনীয়তা
বর্তমানে দেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থা অত্যন্ত কেন্দ্রনির্ভর। বেশিরভাগ সিদ্ধান্ত মন্ত্রণালয় পর্যায়ে কেন্দ্রীভূত, যার ফলে স্থানীয় পর্যায়ে সমস্যা সমাধান দীর্ঘসূত্রিতার শিকার হয়। কমিশনের মতে, বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে প্রশাসনিক কার্যক্রমের দক্ষতা বাড়ানো সম্ভব।
বিশেষ করে, ঢাকা মহানগরীতে অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপ নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা কঠিন করে তুলেছে। এ সংকট মোকাবিলায় ‘ক্যাপিটাল সিটি গভর্নমেন্ট’ প্রবর্তনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যা রাজধানী ও আশপাশের অঞ্চলগুলোর উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে পারে।
প্রাদেশিক সরকার প্রতিষ্ঠার বাস্তবতা
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সাধারণত দুটি মৌলিক কারণে প্রাদেশিক সরকারব্যবস্থা গৃহীত হয়:
বৃহৎ ভৌগোলিক পরিসর: যেমন রাশিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে প্রশাসনিক কার্যকারিতা বাড়াতে প্রাদেশিক ব্যবস্থা কার্যকর ভূমিকা রাখে।
ভাষাগত ও জাতিগত বৈচিত্র্য: ভারত, কানাডা বা স্পেনের মতো দেশে জাতিগত ও ভাষাগত বৈচিত্র্যের কারণে প্রাদেশিক ব্যবস্থা প্রয়োজনীয় হয়ে ওঠে।
কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এ দুটি বৈশিষ্ট্য অনুপস্থিত। ছোট ভৌগোলিক আয়তন ও প্রায় ৯৯% জনগণের ভাষাগত ও জাতিগত ঐক্যের কারণে প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা কতটা বাস্তবসম্মত তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।
প্রাদেশিক সরকার বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ
সংবিধান পরিবর্তন: বাংলাদেশে বিদ্যমান সংবিধান এককেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থার ওপর ভিত্তি করে তৈরি। প্রাদেশিক কাঠামো গ্রহণ করতে হলে সংবিধান সংশোধন করতে হবে, যা সময়সাপেক্ষ ও বিতর্কিত হতে পারে।
অতিরিক্ত প্রশাসনিক ব্যয়: নতুন প্রদেশ গঠনের ফলে আলাদা পার্লামেন্ট, মন্ত্রীসভা, প্রশাসনিক অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে, যা সরকারের জন্য অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করবে।
নির্বাচনী জটিলতা: প্রাদেশিক সরকার চালু হলে কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক নির্বাচন কোনটি আগে হবে, তা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে।
জাতীয় নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জ: প্রাদেশিক কাঠামো দেশের একতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি তৈরি করতে পারে, বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের জটিলতা বিবেচনায় নিলে।
রাজনৈতিক অস্থিরতা: প্রদেশের সীমানা নির্ধারণ ও নামকরণ নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি বিতর্ক তৈরি হতে পারে, যা রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্ম দিতে পারে।
যা করা যেতে পারে
বাংলাদেশে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের জন্য প্রদেশভিত্তিক শাসন কাঠামোর পরিবর্তে স্থানীয় সরকারব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করা যেতে পারে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বায়ত্তশাসন ও আর্থিক ক্ষমতা প্রদান করলে বিকেন্দ্রীকরণের লক্ষ্যে ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া সম্ভব।
এছাড়া, ‘ক্যাপিটাল সিটি গভর্নমেন্ট’ ব্যবস্থা কার্যকর হতে পারে। এতে বিভিন্ন সংস্থা যেমন সিটি করপোরেশন, ওয়াসা ও অন্যান্য সংস্থার মধ্যে সমন্বয় বাড়বে, খরচ কমবে ও নাগরিক সুবিধা উন্নত হবে