জনতা ব্যাংকের রেকর্ড খেলাপি ঋণ: ৬৭,৩০০ কোটি টাকা
সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ফলে প্রভাবশালী ব্যক্তি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো খেলাপি হয়ে পড়ায় ২০২৪ সালের শেষে জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ রেকর্ড ৬৭,৩০০ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। ব্যাংকিং খাতে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ রয়েছে জনতা ব্যাংকে।
জনতা ব্যাংকের ঋণ পরিস্থিতি
ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত জনতা ব্যাংকের মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ১,০০,৮০০ কোটি টাকা, যার মধ্যে ৬৬.৮% বা ৬৭,৩০০ কোটি টাকা খেলাপি। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে এই পরিমাণ ছিল ৬০,৩৪৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রভাব
গত আগস্টের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর থেকে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ দ্রুত বেড়েছে। বিশেষ করে প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ঘনিষ্ঠ প্রতিষ্ঠানগুলো বড় অঙ্কের ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়েছে, যা আগে নিয়মিত পরিশোধযোগ্য হিসেবে দেখানো হতো।
শীর্ষ খেলাপিদের তালিকা
জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণের একটি বিশাল অংশ কয়েকটি বড় ঋণগ্রহীতার হাতে কেন্দ্রীভূত। শীর্ষ পাঁচ খেলাপির হাতে মোট মন্দ ঋণের প্রায় ৭০% রয়েছে।
বেক্সিমকো গ্রুপ: ২৩,০০০ কোটি টাকা
এস আলম গ্রুপ: ১০,২০০ কোটি টাকা
অ্যাননটেক্স গ্রুপ: ৭,৮০০ কোটি টাকা
ক্রিসেন্ট গ্রুপ: ৩,৮০০ কোটি টাকা
থার্মেক্স গ্রুপ: ২,২০০ কোটি টাকা
সিকদার গ্রুপ: ৮৫০ কোটি টাকা
শীর্ষ ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, শুধুমাত্র বেক্সিমকো ও এস আলম গ্রুপ ঋণ পরিশোধ না করায় ব্যাংকটির ঋণ খেলাপির পরিমাণ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির কারণ
জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মতে, অতীতে প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের জন্য বিশেষ অনুমোদন নিয়ে বড় অঙ্কের ঋণ দেওয়া হয়েছিল। এসব ঋণ এখন খেলাপি হয়ে পড়েছে।
২০১৭ সালে জনতা ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল মাত্র ৫,৮১৮ কোটি টাকা। কিন্তু সাত বছরের ব্যবধানে তা বেড়ে ২০২৪ সালে ৬৭,৩০০ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।
তারল্য সংকট ও সরকারের সহায়তার অনুরোধ
ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় সাম্প্রতিক সময়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ২০,০০০ কোটি টাকার জরুরি সহায়তা চেয়েছে জনতা ব্যাংক।
নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. মজিবুর রহমান জানিয়েছেন, খেলাপি ঋণ আদায়ে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে এবং বড় খেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে