বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সাবেক সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন এবং বর্তমান কমিটির সদস্য মাহফুজা আক্তার কিরন, সিলেটের ফুটবল একাডেমির নামে ফিফার দেওয়া সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন। ২০১২ সালে ফিফার তৎকালীন সভাপতি সেপ ব্লাটার বাংলাদেশ সফরে এসে ফুটবল একাডেমি পরিচালনার জন্য ৭ লাখ মার্কিন ডলার (প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা) অনুদান দেওয়ার ঘোষণা দেন। প্রথম দফায় ৪ লাখ এবং পরে ৩ লাখ ডলার পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু, এই অনুদান একাডেমির জন্য খরচ না করে বাফুফে খরচ দেখিয়ে পুরো অর্থ আত্মসাৎ করে।
সিলেট বিকেএসপির ফুটবল একাডেমির জন্য ২০১১ সালে বাফুফে পাঁচ বছরের জন্য মাসিক ৫০ হাজার টাকায় লিজ নেয়। তবে লিজ নেওয়ার পর একটাও টাকা পরিশোধ করা হয়নি এবং প্রায় ৩০ লাখ টাকা পাওনা থেকে যায়। ২০১৩ সালে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ প্রায় দুই কোটি টাকা খরচ করে সিলেট বিকেএসপির একাডেমি সংস্কার করেছে, কিন্তু বাফুফের কোনও টাকাও সেখানে খরচ হয়নি। ক্রীড়া পরিষদের কাজের বিল তারা পরিশোধ করেছে।
ফিফার ৭ লাখ ডলার অনুদান বাফুফে কোনও খাতে ব্যয় না করে, সেই অর্থ আত্মসাৎ করার জন্য ফিফার কাছে ভুয়া হিসাব বিবরণী পাঠায়। সেখানে ৬০ জন খেলোয়াড়, ১০ জন কর্মচারী, দুজন বিদেশি কোচ এবং ছয়জন স্থানীয় কোচের বেতন-ভাতা, খাবারের খরচসহ প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকার খরচ দেখানো হয়। এর মধ্যে ফিফার দেওয়া সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা এবং বাফুফের আরও দুই কোটি টাকার খরচ দেখানো হয়। এসব খরচের কোনও বাস্তব ভিত্তি ছিল না, তা ছিল সম্পূর্ণ ভুয়া।
একাডেমি খোলার পর তা মাত্র ১০ মাস চালু থাকার পর বন্ধ হয়ে যায়। বিদেশি কোচ রেনে কোস্টার ও মরেনোকে নিয়োগ দেওয়া হলেও তাদের কাজে লাগানো হয়নি। কোস্টার জাতীয় দলের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে পাওনা বকেয়া রেখে দেশে ফিরে যান এবং মরেনো কোনো কোচিং অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও নিয়োগ পেয়ে দীর্ঘ সময় কাজ না করে পালিয়ে যান।
এই ঘটনায় বাফুফে প্রশাসনের দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং অব্যবস্থাপনা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ফিফা ২০১৪ সালে বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগকে চার বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে, এবং সাবেক সহসভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদীকে জরিমানা করে। সালাউদ্দিন ও কিরনের নেতৃত্বে পরিচালিত এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি উঠেছে।