ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে হামাস ঘোষণা করেছে যে, তারা জিম্মি মুক্তির পরবর্তী কার্যক্রম স্থগিত করবে। গাজার বন্দি তিন জিম্মির মুক্তি দেওয়ার কথা ছিল শনিবার, যা ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তির বিনিময়ে হতে যাচ্ছিল। তবে হামাস এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের কারণে, যা ইসরায়েলের উপর তাদের ক্ষোভের প্রকাশ। হামাসের মুখপাত্র আবু ওবেইদা দাবি করেছেন যে, ইসরায়েল নিজেদের অঙ্গীকার ঠিকভাবে পালন করেনি, যেমন গাজার বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের ফেরানো এবং মানবিক সহায়তা প্রদান। এছাড়া, তাদের বিরুদ্ধে গুলি চালানোর অভিযোগও তোলা হয়েছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎয হামাসের এই পদক্ষেপকে ‘যুদ্ধবিরতি চুক্তির পরিপূর্ণ লঙ্ঘন’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি সশস্ত্র বাহিনীকে গাজার সম্ভাব্য যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সর্বোচ্চ প্রস্তুতির নির্দেশ দিয়েছেন। ইসরায়েলী মন্ত্রীর এই বক্তব্যটি ৭ অক্টোবরের যুদ্ধের স্মৃতি তুলে ধরে, যেখানে হামাসের হামলায় ইসরায়েলি নাগরিকদের প্রাণহানি ঘটেছিল এবং ইসরায়েল ব্যাপক সামরিক অভিযান চালিয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও এই ঘটনায় মন্তব্য করেছেন, তিনি বলেছেন, যদি গাজায় আটকে থাকা সমস্ত জিম্মি শনিবারের মধ্যে মুক্তি না পায়, তবে যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাতিল করা উচিত। ট্রাম্প এর আগে দাবি করেছিলেন যে, তিনি গাজার মালিকানা নিয়ে আলোচনার জন্য প্রস্তুত আছেন এবং এটি একটি বিপ্লবী পদক্ষেপ হবে। তিনি বলেন, “সব জিম্মিকে একসাথে মুক্তি দেওয়া উচিত, ছিটেফোঁটা নয়। ইসরায়েল ও হামাসকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।”
এদিকে, হামাসের ঘোষণার পর, ইসরায়েলি নাগরিকরা মিছিল বের করে আলন ওহেলের ২৪তম জন্মদিন উপলক্ষে প্রতিবাদে অংশগ্রহণ করেছেন। আলন ৭ অক্টোবরের হামলায় জিম্মি হয়ে গিয়েছিলেন। মিয়া গোল্ডস্টেইন নামের এক ইসরায়েলি নাগরিক বিবিসিকে বলেছেন, তারা মনে করেন জিম্মিদের খুব দ্রুত মুক্তি দেওয়া উচিত ছিল এবং হামাসের এই বিলম্বের সিদ্ধান্ত ভয়ংকর এবং অত্যন্ত দুঃখজনক।
হামাসের মুখপাত্র আরও জানিয়েছেন যে, তারা ইসরায়েলের সঙ্গে মুক্তির চুক্তি পুনরায় কার্যকর করতে প্রস্তুত, তবে এটি শুধুমাত্র তখনই হবে যখন ইসরায়েল সমস্ত বাধ্যবাধকতা যথাযথভাবে পালন করবে। এই পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের মুখপাত্র ফারহান হকও মন্তব্য করেছেন, যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন বা কোনো ধরনের বিলম্ব হওয়া উচিত নয়। সমস্ত পক্ষকে তাদের পূর্বে করা সমঝোতা মেনে চলতে হবে এবং যাতে সব পক্ষের মধ্যে শান্তি ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।
হামাস এবং ইসরায়েল দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দোষারোপের অভিযোগ চলছে, যেখানে ইসরায়েল দাবি করছে যে হামাস ২০২৩ সালের অক্টোবরে ২৫১ জন ইসরায়েলি নাগরিককে জিম্মি করেছিল, যার মধ্যে অনেকেই এখন মৃত। এর ফলে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ব্যাপক সামরিক অভিযান চালিয়েছে, যা ফিলিস্তিনে হাজার হাজার মৃত্যুর কারণ হয়েছে। যুদ্ধের অবসান ঘটানোর লক্ষ্যে দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় আলোচনা চললেও, তীব্র রাজনৈতিক ও মানবিক সংকট চলমান রয়েছে।