Friday, April 18, 2025
spot_imgspot_img
Homeবাণিজ্যজুয়েলারি খাতে প্রতিবছর ৫০০০ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি হচ্ছে বলে জানা গেছে।

জুয়েলারি খাতে প্রতিবছর ৫০০০ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি হচ্ছে বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশের জুয়েলারি খাতে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ ভ্যাট ফাঁকি দেওয়ার ঘটনা ঘটে, যার ফলে সরকার লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে। দেশে প্রায় ৪০ হাজার জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান থাকলেও, মাত্র ৮ হাজার প্রতিষ্ঠানই ভ্যাট নিবন্ধন করে এবং ক্রেতাদের কাছ থেকে আদায়কৃত ভ্যাট সরকারকে জমা দেয়। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অধিকাংশই ভ্যাট আদায় করে না এবং অনেকেই যথাযথভাবে নিবন্ধনও করাচ্ছে না। এর ফলে সরকারের কোষাগারে আসছে না এই খাত থেকে উপার্জিত ভ্যাট, যার পরিমাণ বছরে প্রায় ৫,০০০ কোটি টাকা।

দেশে জুয়েলারি খাতের বাজার আকার ১ লাখ কোটি টাকারও বেশি, কারণ প্রতি বছর স্বর্ণের চাহিদা ২০ থেকে ৪০ টন থাকে। বর্তমানে জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা বিক্রির ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে বাধ্য হলেও, সঠিকভাবে ভ্যাট আদায় হচ্ছে না। যদি সব জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাট নিবন্ধনের আওতায় আনা যায়, তবে এই খাত থেকে রাজস্ব আদায় আরও অনেক বৃদ্ধি পাবে।

বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) জানিয়েছে, সরকারী উদ্যোগে সকল জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাটের আওতায় আনা গেলে বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকা ভ্যাট আদায় সম্ভব। তবে, সব প্রতিষ্ঠানকে একসাথে নিবন্ধনের আওতায় আনা সম্ভব না হলেও, পর্যায়ক্রমে তা সম্ভব হবে। বাজুসের মুখপাত্র আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, বর্তমানে অনেক প্রতিষ্ঠান ভ্যাট নিবন্ধন করলেও তা যথাযথভাবে প্রয়োগ হচ্ছে না এবং অনেক প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট নিবন্ধন নেই। ফলে তারা সরকারের কোষাগারে ভ্যাট জমা দিচ্ছে না।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) জুয়েলারি খাতে শৃঙ্খলা আনতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হচ্ছে, ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) বা বিক্রয় ডাটা কন্ট্রোলার (এসডিসি) বসানোর উদ্যোগ। এই প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ভ্যাট আদায় সহজ হবে এবং নজরদারি বাড়ানো যাবে। এনবিআর আশা করছে, এই উদ্যোগের মাধ্যমে জুয়েলারি খাত থেকে সঠিক ভ্যাট আদায় নিশ্চিত করা সম্ভব হবে, যা সরকারের রাজস্ব বাড়ানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

এদিকে, সিপিডি’র (সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, “এনবিআর অনেক খাতের ভ্যাট নিবন্ধন নিশ্চিত করার জন্য কাজ করছে, তবে জুয়েলারি খাতে এ পর্যন্ত অনেকটা দুর্বলতা দেখা গেছে।” তিনি আরও বলেন, “এটি সরকারের রাজস্ব আদায়ের প্রচেষ্টার দুর্বলতা প্রকাশ করে এবং শিগগিরই এই সমস্যা সমাধানের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।”

এছাড়া, এক্ষেত্রে মাঠ পর্যায়ের তদারকি বাড়ানোর কথাও বলেছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। দেশব্যাপী সঠিকভাবে ভ্যাট আদায় নিশ্চিত করতে এনবিআরকে আরও কঠোর হতে হবে এবং রাজস্ব আদায়ের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। যদি সব জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাটের আওতায় আনা যায়, তাহলে সরকার এই খাত থেকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায় করতে সক্ষম হবে, যা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি পেলে, দেশের রাজস্ব বৃদ্ধি এবং জুয়েলারি খাতে শৃঙ্খলা ফিরে আসতে পারে, যা দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়ক হবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

Most Popular

Recent Comments