Saturday, April 19, 2025
spot_imgspot_img
Homeজাতীয়এ সংবিধান প্রধানমন্ত্রীকে স্বৈরশাসক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

এ সংবিধান প্রধানমন্ত্রীকে স্বৈরশাসক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

বাংলাদেশের সংবিধান সংস্কার কমিশন দাবি করেছে যে, বিদ্যমান সংবিধান প্রধানমন্ত্রীকে স্বৈরশাসক বানিয়ে ফেলেছে। কমিশন তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, ১৯৭২ সালে শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা কাটছাঁট করে প্রধানমন্ত্রীর হাতে অধিক ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করেছিলেন, ফলে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা একচ্ছত্রভাবে বৃদ্ধি পায় এবং রাষ্ট্রপতি হয়ে যান একটি আলঙ্কারিক পদে। এতে, রাষ্ট্রপতির কোনো কার্যকর ক্ষমতা নেই এবং প্রধানমন্ত্রীর হাতে দেশের সকল ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হয়েছে। কমিশন এই ব্যবস্থাকে রাষ্ট্রের ভারসাম্য নষ্টকারী হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদ্যমান সংবিধান রাষ্ট্রপতির একক ক্ষমতাকে সীমিত করে প্রধানমন্ত্রীর হাতে ক্ষমতা দিয়ে স্বৈরশাসনের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। সংবিধানটি ১৯৭২ সালে প্রণীত হলেও, সেই সময়ের রাজনৈতিক পরিবেশের কারণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজ হাতে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা বাড়িয়েছিলেন। এতে রাষ্ট্রপতি কার্যত কোনো ক্ষমতাহীন অবস্থায় পরিণত হন।

কমিশন সুপারিশ করেছে যে, সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ভারসাম্য আনার জন্য কিছু পদক্ষেপ নেয়া উচিত। বিশেষ করে, প্রধান বিচারপতির নিয়োগের বিষয়টি রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যস্ত করা উচিত, এবং রাষ্ট্রপতির অন্যান্য সাংবিধানিক পদে নিয়োগের দায়িত্ব দেওয়া উচিত। এছাড়া, কমিশন ৭(খ) বিধান বাতিল করার সুপারিশ করেছে, যা সংবিধানের এক-তৃতীয়াংশের বেশি অংশ সংশোধন অযোগ্য ঘোষণা করেছিল।

কমিশনের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বর্তমান সংবিধান সমাজতন্ত্রকে একটি অপ্রাসঙ্গিক ধারণা হিসেবে দেখছে, যা আধুনিক যুগে সমাজের বাস্তবতায় খাপ খায় না। তাই, সমাজতন্ত্রের ধারণাটি বাদ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

কমিশন রাষ্ট্রপতির দায়িত্বে কিছু সুনির্দিষ্ট দিকও প্রস্তাব করেছে, যেমন—রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি নিয়োগ, উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগ এবং অন্যান্য সাংবিধানিক পদে নিয়োগে সুপারিশ করার ক্ষমতা রাখবেন। এই সুপারিশগুলো রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র ক্ষমতা কমানোর লক্ষ্যে করা হয়েছে।

কমিশন তার প্রতিবেদনে সংবিধানের ভাষা সহজ করতে এবং জনগণের জন্য বোঝার উপযোগী করতে বিদ্যমান সাধু ভাষার পরিবর্তে চলিত ভাষা ব্যবহার করারও পরামর্শ দিয়েছে। এর মাধ্যমে, সংবিধানটি সাধারণ জনগণের কাছে আরো প্রবেশযোগ্য হবে, যা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উন্নতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

এছাড়া, কমিশন যেসব বিধান বাতিলের সুপারিশ করেছে, তার মধ্যে স্থানীয় আদালতের ব্যাপারে একটি নতুন কাঠামো প্রস্তাব করা হয়েছে, যেখানে “অধস্তন আদালত” শব্দটি পরিবর্তন করার কথা বলা হয়েছে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

Most Popular

Recent Comments