Saturday, April 19, 2025
spot_imgspot_img
Homeজাতীয়নোয়াখালীর দক্ষিণে উদিত হচ্ছে নতুন বাংলাদেশ!

নোয়াখালীর দক্ষিণে উদিত হচ্ছে নতুন বাংলাদেশ!

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় উপসাগর আমাদের বঙ্গোপসাগর। তার উত্তরে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বদ্বীপ আমাদের বাংলাদেশ। প্রকৃতির বিচিত্র খেয়ালে ভাটির দেশ বাংলাদেশ বরাবরই ভৌগোলিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলেছে। আমাদের উজানের প্রতিবেশীরা জাতিসংঘের নদী ও পানি কনভেনশনকে উপেক্ষা করে নদীর গতিপথ পরিবর্তনসহ বিভিন্ন বাঁধ নির্মাণ করে, যা বাংলাদেশের ভূগোলকে প্রভাবিত করছে। তবে প্রকৃতির এক আশীর্বাদ হিসেবে বঙ্গীয় বদ্বীপের বিস্তৃতি বাংলাদেশকে নতুন সম্ভাবনার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে।

স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ১৯৮৪ সাল থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশের দক্ষিণ উপকূলে, বিশেষ করে নোয়াখালী ও সংলগ্ন উপকূলীয় অঞ্চলে নতুন ভূমি সৃষ্টি হচ্ছে। এর মধ্যে নিঝুম দ্বীপের সম্প্রসারিত অংশ স্বর্ণদ্বীপ, ভাসানচর ও সন্দ্বীপের বিস্তৃতি লক্ষণীয়। এই নতুন ভূখণ্ডের পরিমাণ আনুমানিক ৮০০ বর্গ কিলোমিটারের বেশি, যা সিঙ্গাপুর ও মালদ্বীপের সম্মিলিত আয়তনের সমান। এছাড়া, আরও প্রায় ১০০০ বর্গ কিলোমিটার ডুবো চর রয়েছে, যা ভবিষ্যতে দেশের স্থলভাগের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে।

রিমোট সেন্সিং ও জিআইএস বিশেষজ্ঞ আহসানুল হকের মতে, ভৌগোলিক গঠনের কারণে বাংলাদেশের উপকূলে প্রতিবছর প্রায় ২০ বর্গ কিলোমিটার নতুন ভূমি গঠিত হচ্ছে। স্যাটেলাইট ইমেজ পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, এ পর্যন্ত প্রায় ১০০০ বর্গ কিলোমিটারের কাছাকাছি নতুন ভূমি তৈরি হয়েছে এবং এ প্রবণতা অব্যাহত থাকবে।

২০০৬ সালে জেগে ওঠা ভাসানচরে বর্তমানে ভাটার সময় সন্দ্বীপ থেকে হেঁটে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে। নিঝুম দ্বীপ থেকে মুক্তারিয়ার ঘাটসহ কয়েকটি স্থানে ক্রস ড্যাম নির্মাণ এবং প্রযুক্তিগত পদক্ষেপ নেওয়া হলে আগামী কয়েক বছরে এই এলাকার আয়তন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে। গবেষকদের অনুমান, একে কেন্দ্র করে নতুন ভূখণ্ডের বিস্তৃতি ১৫,০০০ বর্গ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, যা বঙ্গোপসাগরের বুকে নতুন বাংলাদেশের সম্ভাবনা সৃষ্টি করছে।

বিগত ১০ হাজার বছরে বঙ্গীয় বদ্বীপের গঠন প্রক্রিয়া নদীর সঞ্চয়ী পলির মাধ্যমে ধাপে ধাপে বিকশিত হয়েছে। গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা নদীর প্রবাহ হিমালয় থেকে নেমে এসে প্রতি বছর প্রায় ১.২ বিলিয়ন টন পলি বহন করে বঙ্গোপসাগরের উপকূলে জমা করছে। এর একটি বড় অংশ বিশেষ করে নোয়াখালীর উপকূলের কাছে পলি জমার মাধ্যমে নতুন চর ও দ্বীপ গঠনের প্রধান কারণ হয়ে উঠছে।

গত দুই দশকে ২৫ বর্গ কিলোমিটারের বেশি নতুন ডুবোচর সৃষ্টি হয়েছে এবং স্যাটেলাইট পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ২৫ বছরে প্রায় ৮০০ বর্গ কিলোমিটার ভূমি স্থায়ী রূপ লাভ করেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, উপকূলীয় অঞ্চলে উন্নত গবেষণা ও পরিকল্পিত অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে এই নতুন ভূখণ্ড বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারবে।

এই নতুন ভূমির সংযোজন বাংলাদেশের ভৌগোলিক মানচিত্রে এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করছে, যা ভবিষ্যতে কৃষি, মৎস্য এবং আবাসন খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। সঠিক পরিকল্পনা ও প্রযুক্তির সমন্বয়ে বঙ্গোপসাগরের বুক থেকে উঠে আসা এই নতুন বাংলাদেশ হয়ে উঠতে পারে উন্নয়নের এক নতুন মাইলফলক।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

Most Popular

Recent Comments