তারিক আহমেদ সিদ্দিক: ক্ষমতার ছায়ায় সম্পদের পাহাড়
সাবেক মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিক ছিলেন বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের একজন। শেখ হাসিনার নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে তিনি ক্রসফায়ার, গুম-খুন এবং সামরিক বাহিনীর বদলি-পদোন্নতিতে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন। অভিযোগ রয়েছে, সামরিক ও বেসামরিক খাতে প্রভাব খাটিয়ে হাজার কোটি টাকার সম্পদ গড়ে তুলেছেন তিনি।
অঢেল সম্পদের মালিকানা
তারিক সিদ্দিক পূর্বাচল, রূপগঞ্জ, গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় শত শত বিঘা জমি কিনেছেন। পূর্বাচলের ৩০০ ফিট সড়কের পাশে বাড়িয়াছনি মৌজায় তার পাঁচটি প্লট রয়েছে। রূপগঞ্জের গোপালেরঠুঠা গ্রামে ১৫০ শতাংশের মাছের ঘের এবং দাউদপুর ইউনিয়নে বিরহাটাব মৌজায় বিশাল জমি রয়েছে তার দখলে। জলসিঁড়ি আবাসিক প্রকল্পে তার নামে ৪১টি প্লট, যার মধ্যে বিলাসবহুল বাড়িও নির্মাণ করা হয়েছে।
ঢাকার মিরপুর, বারিধারা, ধানমণ্ডি, বনানী, গুলশান, ক্যান্টনমেন্টসহ বিভিন্ন এলাকায় তার স্ত্রী শাহিন সিদ্দিক ও মেয়ে বুশরা সিদ্দিকের নামে বহু প্লট ও ফ্ল্যাট রয়েছে। গাজীপুরের জয়দেবপুরে “বাগান বিলাস” নামে বিশাল বাংলো বাড়ি, ফাওকাল মৌজায় সুবিশাল বাগানবাড়ি এবং চান্দনা মৌজায় ১৩ বিঘার আরেকটি সম্পত্তি রয়েছে।
ব্যবসা ও প্রভাব
তারিক সিদ্দিক সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনে ব্যাপক প্রভাব খাটিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগে অভিযুক্ত। শেয়ারবাজার, ব্যাংক-বীমা, পোশাকশিল্প, এভিয়েশন, জ্বালানি ও আবাসন খাতে তার একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ছিল। বসুন্ধরা, জলসিঁড়িসহ বড় আবাসন প্রকল্পগুলোতে তার গোপন বিনিয়োগের তথ্য পাওয়া গেছে।
দুর্নীতি ও বিতর্ক
তাকে নিয়ে ব্যবসায়ীদের মাঝে ব্যাপক আতঙ্ক ছিল। অভিযোগ রয়েছে, তিনি শত শত কোটি টাকার সম্পদ জোরপূর্বক দখল করেছেন। আইনজীবী রফিকুল ইসলাম মোল্লার ভাষ্যমতে, তারিক সিদ্দিক র্যাবের মাধ্যমে ভয় দেখিয়ে জমি কিনতেন। তার পালিত ছেলে মেজর শরিফ রূপগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় তার হয়ে জমি কেনার দায়িত্বে ছিলেন।
পরিণতি
২০২৪ সালের আন্দোলনের পর শেখ হাসিনা ক্ষমতা হারালে তারিক সিদ্দিক ভারতে পালিয়ে যান। এরপর তার বহু সম্পত্তি জনরোষের শিকার হয়। স্থানীয়রা তার বেশ কিছু বাংলো ও সম্পদ ভাঙচুর করে।
তারিক সিদ্দিকের সম্পদের ব্যাপ্তি এবং তার ক্ষমতার অপব্যবহারের ইতিহাস তাকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামরিক অঙ্গনের অন্যতম আলোচিত বিতর্কিত ব্যক্তিতে পরিণত করেছে।