এবারের একুশে বইমেলা একটি বিশেষ অভ্যুত্থান থিমে সজ্জিত হয়েছে, যেখানে ভাষা আন্দোলনের পাশাপাশি ১৯৭৪ সালের জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানও গুরুত্বপূর্ণ স্থান পেয়েছে। মেলার সব জায়গায় এই আন্দোলনকে স্মরণ করে স্লোগান, ব্যানার, গ্রাফিতি এবং পোস্টারসহ বিভিন্ন আয়োজন করা হয়েছে। “বুকের ভেতর দারুণ ঝড়”, “আপস না সংগ্রাম?”—এমন স্লোগানগুলোর মাধ্যমে বইমেলার পরিবেশ হয়ে উঠেছে এক নতুন চেতনায় পূর্ণ। স্টলে স্টলে জুলাই আন্দোলন ও স্বাধীনতার সংগ্রামের বই ও সামগ্রী দেখলে, মনে হয় যেন পুরো বইমেলা জুলাইয়ের ইতিহাসে ডুবে রয়েছে।
বইমেলার এই বছরটি ঐতিহাসিকভাবে আলাদা, কারণ এখানে প্রকাশিত বইগুলো শুধু ভাষা আন্দোলন সম্পর্কিত নয়, পাশাপাশি ২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ‘শেখ হাসিনার পতনকাল’, ‘হ্যাশট্যাগ জুলাই’ এবং ‘৩৬ Days of July’—এই বইগুলো বেস্টসেলার হিসেবে স্থান পেয়েছে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে জুলাই আন্দোলন নিয়ে এই আগ্রহ প্রবল। প্রকাশনী প্রতিষ্ঠানগুলোও বিভিন্ন ধরনের জুলাই কেন্দ্রিক বই নিয়ে স্টল সাজিয়েছে, যেমন ঐতিহ্য প্রকাশনীর ‘ছাত্র জনতার অভ্যুত্থান’ এবং ‘শেখ হাসিনার পতনকাল’।
এছাড়া, মেলার অংশ হিসেবে ‘৩৬ জুলাই’ নামে একটি ফটো বুথ স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে দর্শনার্থীরা জুলাইয়ের স্মৃতিকে ছবির মাধ্যমে স্মরণ করছেন। এই বুথে আন্দোলনের সময়কার বিভিন্ন ঘটনা যেমন গুলি চালানো, পুলিশের নির্যাতন, ছাত্রলীগ কর্তৃক নিগ্রহ, এসব চিত্র অঙ্কিত রয়েছে। পাঠকরা এখানে এসে সেই স্মৃতিগুলো ধরে রাখছেন।
এছাড়া, মেলার অন্যান্য স্টলে ‘মাতৃভূমি অথবা মৃত্যু’ ও ‘রক্তাক্ত জুলাই’ নামক বইগুলি বিক্রি হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। বিভিন্ন স্টলগুলিতে জনসাধারণের জন্য শিল্পকলা একাডেমি পোস্টার এবং ভার্চুয়াল রিয়েলিটি প্রদর্শনীর মাধ্যমে জুলাই আন্দোলনের ইতিহাস জানাচ্ছে। এমনকি, বইমেলার আয়োজকরা এই থিমে সজ্জা ও কার্যক্রমের মাধ্যমে ইতিহাসের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মানুষের মধ্যে আন্দোলনের চেতনা বয়ে নিয়ে আসছেন।
এই বছর বইমেলা শুধু বই কেনাবেচার স্থান নয়, এটি ইতিহাস, সংগ্রাম ও চেতনার মিশ্রণ হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছে।