ফরিদপুর-২ আসন থেকে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা এবং কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম (বাবুল) নিজ নির্বাচনী মাঠ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন। গত শুক্রবার বিকেলে ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার কোনাগ্রামে নিজের বাড়িতে একটি আবেগঘন অনুষ্ঠানে তিনি এই ঘোষণা দেন। এসময় শহীদুল ইসলাম তার সমর্থকদের বিদায় জানিয়ে ফরিদপুর-৪ আসনে কাজ শুরু করবেন বলে জানান, যা তার রাজনৈতিক জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হবে।
শহীদুল ইসলাম তার সমর্থকদের উদ্দেশ্যে আবেগপূর্ণ ভাষায় বলেন, “একজন রাজনৈতিক নেতার কাছে তাঁর সহকর্মীদের চোখের পানি সবচেয়ে মূল্যবান। আজ আমার জন্য কত মানুষ কষ্ট পাচ্ছেন, কাঁদছেন। রাজনীতি করেছি বলে এত ভালোবাসা পেয়েছি।” তিনি জানান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে ফরিদপুর-৪ আসনে কাজ শুরু করতে যাচ্ছেন। শহীদুলের এই সিদ্ধান্তের পর তার সমর্থকরা আবেগে ভেঙে পড়েন এবং তাঁর সঙ্গে কান্নায় মিশে যান। শহীদুল নিজেও কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, “আমি আমার নেতার কথা ফেলতে পারি নাই। সম্পর্ক হয় আদর্শের। এ সম্পর্ক রক্তের সম্পর্কের চাইতে অনেক মূল্যবান।”
তবে শহীদুলের এই সিদ্ধান্তের পেছনে ছিল দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক বিরোধ। ফরিদপুর-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে শহীদুল এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদের মধ্যে বিরোধ চলছিল। দুজনের বাড়ি নগরকান্দায়, তবে সালথা ও নগরকান্দা নিয়ে গঠিত ফরিদপুর-২ আসনে প্রভাব বিস্তার নিয়ে তাদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল। এই বিরোধের কারণে ২১ আগস্ট রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে একজন নিহত হন এবং পরে বিএনপি কেন্দ্রীয়ভাবে শহীদুল ও শামাকে পদ স্থগিত করে। তবে নভেম্বর মাসে তাদের পদ স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয়।
শহীদুল ইসলামের সরে যাওয়ার পর তার সমর্থকদের জন্য এটি একটি কঠিন মুহূর্ত। তিনি তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, “এখন আপনাদের কিছু সমস্যা হবে, অপমান সহ্য করতে হবে। তবে একসঙ্গে থাকবেন, ঐক্যবদ্ধ থাকবেন। আপনারা যদি একসঙ্গে থাকেন, রাজনীতি হবে না, নির্বাচন হবে না। যদি ভাগ হয়ে যান, তবে গঞ্জনা ও অপমান সহ্য করতে হবে।” তিনি তার সমর্থকদের বিভক্ত না হওয়ার আহ্বান জানান, কারণ, এই ধরনের বিভক্তি দলের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
শহীদুল ইসলাম তার ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথা বলেন, “সংঘাত সহিংসতা রক্তপাত আমি পছন্দ করি না। আমি জানি, আপনাদের ভেতর থেকে আগামী দিনের নেতৃত্ব সৃষ্টি হবে।” তিনি দলের নেতা হিসেবে পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন এবং দলের ঐক্য বজায় রাখতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার পরামর্শ দেন।
শহীদুল ইসলামের এই সিদ্ধান্তের পর, সদরপুর, চরভদ্রাসন এবং ভাঙ্গা উপজেলার বিএনপি ও কৃষক দলের নেতা-কর্মীরা তাকে ফরিদপুর-৪ আসনে বিএনপির নেতা হিসেবে বরণ করে নেন। এর মাধ্যমে শহীদুল ইসলামের রাজনীতি এবং ফরিদপুর-৪ আসনে তার নতুন যাত্রা শুরু হলো।