অগ্নিঝরা মার্চ’ বাঙালির স্বাধীনতার সংগ্রামের মাস, যা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সূচনা হয়। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হল মহান মুক্তিযুদ্ধ, যেখানে সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে বাঙালি জাতির দীর্ঘদিনের সামাজিক-রাজনৈতিক স্বপ্ন পূর্ণতা পায়। ১৯৭১ সালের মার্চে বাঙালি জাতির ঐতিহাসিক সংগ্রাম একটি নতুন মাত্রা লাভ করে, যা শুরু হয়েছিল বহু বছর আগে, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন এবং ১৯৬৯ সালের গণ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে।
এই সময়ের মধ্যে বাঙালির চেতনায় একটি শক্তিশালী স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা জেগে ওঠে। ১৯৭১ সালের মার্চে, বাঙালি জাতি বুঝতে পারে যে, তাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম সফলতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রামের চূড়ান্ত পর্ব শুরু হয় এবং সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়।
২৬ মার্চ, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের ঘোষণা অনুযায়ী, জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করা হয় এবং এটি সারাদেশে রেডিওতে প্রচারিত হয়। এই ঘোষণার পর, পাকিস্তানি শাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয় এবং ঢাকা শহরসহ সারা দেশে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এই সময়ে, ঢাকা স্টেডিয়ামে পাকিস্তান ও বিশ্ব একাদশের মধ্যে ক্রিকেট ম্যাচ চলছিল, এবং ক্রিকেট দর্শকরা প্রথমবার ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়।
পাকিস্তান সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বাঙালির আন্দোলন তীব্র হয়ে ওঠে। ২ ও ৩ মার্চ সাধারণ হরতাল ঘোষণা করা হয় এবং ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি বাহিনী বাঙালি জনগণের ওপর আক্রমণ চালায়, যা কালো রাতে পরিণত হয়। এরপর ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার পর, সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়।
এএই পথপরিক্রমায়, বাঙালি জনগণের সংগ্রামের মাধ্যমে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয় স্বাধীন বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালের অগ্নিঝরা মার্চে শুরু হওয়া এই সংগ্রাম ছিল ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়। ‘অগ্নিঝরা মার্চ’ শুধু স্বাধীনতার সংগ্রামের মাস ছিল না, এটি ছিল বাঙালি জাতির আত্মবিশ্বাস এবং স্বাধিকার অর্জনের মাস।