Saturday, April 19, 2025
spot_imgspot_img
Homeজাতীয়"কেন কিছু মানুষ ভূমিকম্প অনুভব করেন না?"

“কেন কিছু মানুষ ভূমিকম্প অনুভব করেন না?”

কেন কিছু মানুষ ভূমিকম্প অনুভব করেন না?

বাংলাদেশে অনেক সময় ভূমিকম্প হয়, কিন্তু কিছু মানুষ টের পান না। সম্প্রতি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছিল, কিন্তু অনেকেই জানিয়ে দিয়েছেন যে তারা কিছুই অনুভব করেননি। এই ধরনের পরিস্থিতি সবসময় ঘটে থাকে, এবং এটি ভূমিকম্পের প্রকৃতি ও মানুষের শারীরিক অবস্থার উপর নির্ভর করে। কিছু মানুষ ভূমিকম্পের ঝাঁকুনিটা অনুভব করতে পারেন, আবার কিছু মানুষ তা অনুভব করেন না। তবে কেন এমনটা হয়? চলুন, জানি।

ভূমিকম্পের অনুভূতির তারতম্য

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স ডিপার্টমেন্টের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. শাখাওয়াত হোসেন জানান, ভূমিকম্পের সময় আপনি কোথায় অবস্থান করছেন, সেটি ভূমিকম্প অনুভবের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভূমিকম্পের অনুভূতির তারতম্য অনেক বিষয়েই নির্ভর করে, যার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো আপনার অবস্থান। সাধারণত, উপরের তলায় থাকা মানুষের মধ্যে ভূমিকম্পের ঝাঁকুনি অনুভব করার সম্ভাবনা বেশি। কারণ, উপরের তলা বেশি নড়াচড়া অনুভব করে, কিন্তু নিচতলায় থাকা মানুষরা সাধারণত কম ঝাঁকুনি অনুভব করেন। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনি কোন উঁচু ভবনে থাকেন এবং ভূমিকম্প হয়, তবে উপরের তলায় ভূমিকম্পের তীব্রতা বেশি অনুভূত হবে। তবে নিচতলায় থাকা কেউ হয়তো সেভাবে কিছু টের পাবেন না।

এছাড়া, ভূমিকম্পের সময় একজনের অবস্থানও বড় ধরনের ভূমিকা পালন করে। আপনি যদি কোনো কাজ করতে ব্যস্ত থাকেন, যেমন রান্না করা বা হাঁটাহাঁটি করা, তবে ভূমিকম্প টের পেতে আপনার কিছুটা অসুবিধা হতে পারে। কারণ, চলাচলের সময় আপনি নিজে ঝাঁকুনিটি অনুভব করতে পারবেন না। তবে যদি আপনি স্থির অবস্থায় থাকেন, যেমন বসে থাকলে, তখন ভূমিকম্পের ঝাঁকুনি খুব ভালোভাবে অনুভব করা সম্ভব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক আরো বলেন, “যিনি রান্না করছেন বা দৌঁড়াচ্ছেন, তিনি ভূমিকম্প অনুভব না করলেও, যিনি স্থিরভাবে টেবিলে বসে কাজ করছেন, তার টের পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।”

ব্যক্তিগত সেনসিটিভিটি

অন্যদিকে, কিছু মানুষের শারীরিক সংবেদনশীলতা কম থাকতে পারে, যার কারণে তারা ভূমিকম্পের ঝাঁকুনি অনুভব করতে পারেন না। ড. মো. শাখাওয়াত হোসেন বলেন, “কিছু মানুষ উচ্চতা বা গতির ব্যাপারে খুব বেশি সংবেদনশীল থাকে।” তিনি আরো বলেন, “যাদের সেনসিটিভিটি কম, তারা ভূমিকম্পের মতো ছোট ছোট অস্থিরতা বুঝতে পারেন না।” এ কারণে, কিছু মানুষ সহজেই ভূমিকম্পের প্রভাব অনুভব করতে পারেন না।

বিভিন্ন উচ্চতায় ভূমিকম্প অনুভবের পার্থক্য

আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের সহকারী আবহাওয়াবিদ ফারজানা সুলতানা জানান, ভূমিকম্পের সময় বিভিন্ন উচ্চতায় ভিন্ন ভিন্ন অনুভূতি হতে পারে। সাধারণত, একটি ভবনের নীচতলায় অবস্থানকারী কেউ ভূমিকম্পের ঝাঁকুনি অনুভব না করলেও, তলার উপরের মানুষ তা স্পষ্টভাবে অনুভব করতে পারে। এর কারণ হচ্ছে, ভূমিকম্পের শক্তি উপরের তলায় বেশি অনুভূত হয়। তবে, কিছু ক্ষেত্রে এমনও দেখা যায় যে, নিচতলায় থাকা কোনো ব্যক্তি ভালোভাবে ভূমিকম্পের ঝাঁকুনি অনুভব করেছেন, আবার উচ্চতর তলায় থাকা ব্যক্তি অনুভব করেননি। এটি ভূমিকম্পের তীব্রতা এবং আপনার অবস্থানের ওপর নির্ভর করে।

ভূমিকম্পের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা

ভূমিকম্পের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা কেবল আপনার অবস্থানের ওপর নির্ভর করে না, এটি ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল এবং তার শক্তির ওপরও নির্ভর করে। বাংলাদেশের ভূগোল খুবই ভঙ্গুর এবং এটি তিনটি প্রধান টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থান করছে, যেগুলি হল: ইন্ডিয়ান প্লেট, ইউরেশিয়ান প্লেট, এবং বার্মা প্লেট। এই প্লেটগুলির সংঘর্ষে পৃথিবীর ভূ-পৃষ্ঠে ফাটল সৃষ্টি হয়, যার ফলে ভূমিকম্প হয়। বাংলাদেশের ভেতরে এবং বাইরের বড় বড় ফল্ট (ফাটল) লাইন রয়েছে, যার কারণে ভূমিকম্পের ঝুঁকি আছে।

গত বছরের ৩ জানুয়ারি, মিয়ানমারের হোমালিন অঞ্চলে ৫ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছিল, যার প্রভাব বাংলাদেশে পড়ে। একইভাবে, তিব্বতের শিগেৎসে এলাকায় একটি ৭.১ মাত্রার ভূমিকম্পের প্রভাব বাংলাদেশেও অনুভূত হয়, যদিও সেখান থেকে ঢাকার দূরত্ব ছিল ৬১৮ কিলোমিটার। এর মানে হলো, সারা পৃথিবীজুড়ে কোথাও ভূমিকম্প ঘটলে, তা বাংলাদেশেও অনুভূত হতে পারে, যদিও এর তীব্রতা কম থাকবে।

ভূমিকম্পের প্রভাব এবং প্রস্তুতি

বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাংলাদেশ ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল হিসেবে পরিচিত, তবে আমাদের এই ব্যাপারে যথাযথ প্রস্তুতি নেই। এখানকার বিল্ডিং কোডগুলি সঠিকভাবে অনুসরণ করা হয় না, ফলে ভূমিকম্পের সময় বড় ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ ধরনের ভূমিকম্পের প্রকৃতি এবং প্রস্তুতির অভাব থেকে বুঝা যায় যে, বাংলাদেশের ভূমিকম্পজনিত বিপদ মোকাবেলা করার জন্য আমাদের আরও সতর্ক এবং প্রস্তুত থাকতে হবে।

সবশেষে, ভূমিকম্পের সময় সবার শরীরিক অবস্থান, সংবেদনশীলতা, এবং আবহাওয়া অবস্থার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। তবে একথা নিশ্চিত, ভূমিকম্পে বাংলাদেশ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, এবং প্রস্তুতি গ্রহণ করা প্রয়োজন।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

Most Popular

Recent Comments