টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে দুদকের দুর্নীতির অভিযোগ
বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) যুক্তরাজ্যের সাবেক মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে সরকারি জমির অবৈধ বণ্টনের অভিযোগ এনেছে। ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুদকের তদন্তে উঠে এসেছে যে, তিনি জাল নোটারি নথি ব্যবহার করে তার বোনের কাছে সম্পত্তি হস্তান্তর করেছেন। ওই নথিতে থাকা আইনজীবীর স্বাক্ষরও জাল বলে প্রমাণিত হয়েছে।
রাজনৈতিক প্রভাব ও অবৈধ জমি বরাদ্দ
দুদকের দাবি, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোনের মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ঢাকার পূর্বাচল নিউ টাউন প্রকল্পে নিজ ও পরিবারের জন্য সরকারি জমি বরাদ্দ নেন। তদন্তে জানা গেছে, তিনি নিয়ম লঙ্ঘন করে জমি বরাদ্দ পেয়েছেন এবং সরকারি জমির মালিকানা গ্রহণ করেছেন। দুদকের অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি ভুয়া নোটারি নথির মাধ্যমে তার বোনের নামে একটি ফ্ল্যাট হস্তান্তর করেছেন।
দুদকের আইনি ব্যবস্থা ও তদন্ত
দুদক জানিয়েছে, তারা এই অভিযোগ আদালতে উপস্থাপন করবে এবং আদালত অনুমোদন দিলে বিচারিক কার্যক্রম শুরু হবে। দুদক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন জানিয়েছেন, শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের আরও অনেক দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তাধীন রয়েছে।
শেখ হাসিনার শাসনামল ও দুর্নীতির অভিযোগ
গত বছরের আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসন শেষ হয়। এরপর তার পরিবারকে ঘিরে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ সামনে আসে। দুদকের তদন্তে জানা গেছে, পূর্বাচল নিউ টাউন প্রকল্পের ৬০ কাঠা (প্রায় এক একর) সরকারি জমি শেখ হাসিনা, তার সন্তান ও পরিবারের ঘনিষ্ঠজনদের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। টিউলিপ সিদ্দিক পূর্বাচলে জমি পাওয়ার যোগ্য ছিলেন না, তবে তিনি নিয়ম লঙ্ঘন করে প্লট পেয়েছেন।
জাল নথি ও প্রতারণার অভিযোগ
দুদকের তদন্ত অনুযায়ী, টিউলিপ গুলশানের একটি ফ্ল্যাট তার বোন আজমিনা সিদ্দিকের নামে হস্তান্তর করতে জাল নোটারি নথি ব্যবহার করেছিলেন। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী গাজী সিরাজুল ইসলামের স্বাক্ষর নথিতে থাকলেও তিনি স্বাক্ষর করার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, নোটারির স্বাক্ষর তার স্বাক্ষরের সঙ্গে মেলে না এবং টিউলিপ সিদ্দিক বা আজমিনা সিদ্দিকের সঙ্গে তার কোনো পূর্ব পরিচয় ছিল না।
হেবা দলিল ও সম্পত্তি গোপনের চেষ্টা
বিতর্কিত নথিটি ২০১৫ সালের একটি হেবা দলিল, যা সাধারণত কাউকে সম্পত্তি উপহার দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়। দুদকের মতে, এটি প্রতারণার একটি অংশ এবং সম্পত্তির প্রকৃত মালিকানা গোপন রাখার কৌশল।
রাজনৈতিক প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
টিউলিপ সিদ্দিক যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। তিনি জানুয়ারিতে যুক্তরাজ্যের সরকারি পদ থেকে পদত্যাগ করেন, কারণ তার বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগের কারণে সরকারের কাজে বিঘ্ন ঘটতে পারে বলে মনে করা হচ্ছিল। ফিন্যান্সিয়াল টাইমস টিউলিপ সিদ্দিকের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলেও তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
এই অভিযোগের সত্যতা আদালতে প্রমাণিত হলে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতেও আলোড়ন সৃষ্টি করতে পারে