রাজধানীর বনশ্রীতে স্বর্ণ ছিনতাই: ২০ জনের ডাকাত চক্র, ৬ জন গ্রেপ্তার
রাজধানীর বনশ্রীতে ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে ও গুলি করে স্বর্ণ ছিনতাইয়ের ঘটনায় একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। এই চক্রের সদস্য সংখ্যা অন্তত ২০ জন, যারা দীর্ঘদিন ধরে ছিনতাই ও ডাকাতির সঙ্গে জড়িত। তাদের মধ্যে কেউ ৩৫ বছর, কেউ ১৫ বছর ধরে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।
ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা ও কৌশল
চক্রের সদস্যরা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার স্বর্ণের দোকান ও ব্যবসায়ীদের চলাচল নজরদারি করে। ছিনতাইয়ের আগে তারা একাধিক দিন রেকি করে, সুযোগ বুঝে পরিকল্পিতভাবে হামলা চালায়।
বনশ্রীতে স্বর্ণ ছিনতাইয়ের ঘটনার আগেও তারা দুই দিন ধরে ‘অলংকার জুয়েলার্স’ এবং দোকানের মালিক আনোয়ার হোসেনের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করেছিল। সব সদস্য মিলে ২৩ ফেব্রুয়ারি রাত পৌনে ১১টায় অপারেশন পরিচালনা করে।
ছিনতাইয়ের ধরন:
৭ জন সরাসরি অংশ নেয়
৩টি মোটরসাইকেল ব্যবহার করা হয় (নম্বর প্লেট ছিল না)
অন্য একটি দল বিটিভি ভবনের সামনে ‘ব্যাকআপ’ হিসেবে অবস্থান নেয়
ছিনতাই শেষে মোটরসাইকেল ও সিএনজিচালিত অটোরিকশায় চক্রের সদস্যরা এলাকা ত্যাগ করে
গ্রেপ্তারকৃতরা ও তাদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড
পুলিশ এ পর্যন্ত ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে, যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত।
গ্রেপ্তারকৃতরা:
কাওসার সিকদার (দলনেতা) – তার বিরুদ্ধে বরিশাল, পটুয়াখালী ও ঢাকায় তিনটি ডাকাতির মামলা রয়েছে
আমিনুল ইসলাম – ছাত্রলীগের স্থানীয় নেতা, তার বিরুদ্ধে চুরি ও ডাকাতির চারটি মামলা
সুমন – শ্রমিক দলের নেতা, পেশাদার ডাকাত দলের সদস্য
খলিলুর রহমান – পাঁচটি ডাকাতির মামলা রয়েছে
ফরহাদ আলী – বিভিন্ন থানায় আটটি মামলা রয়েছে, ২৫ বছর ধরে ডাকাতি করছে
দুলাল চৌধুরী – স্বর্ণ কেনাবেচার সঙ্গে জড়িত, বিভিন্ন থানায় তিনটি ডাকাতির মামলা
পুলিশ গ্রেপ্তারের সময় দুই ভরি স্বর্ণ, একটি রিভলবার ও একটি মোটরসাইকেল জব্দ করেছে।
রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা ও বিতর্ক
পুলিশের তথ্যানুযায়ী, গ্রেপ্তারকৃত দু’জন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত।
আমিনুল ইসলাম পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা ছাত্রলীগের সদস্য ছিলেন
সুমন শ্রমিক দলের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সহ-দপ্তর সম্পাদক ছিলেন
তবে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক নেতারা দাবি করছেন, তারা এই অপরাধীদের চেনেন না এবং ইতিমধ্যে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
ছিনতাইয়ের শিকার ব্যবসায়ীর অভিযোগ
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী হোসনে আরা বেগম রামপুরা থানায় মামলা করেন। তিনি অভিযোগ করেন, ১৬০ ভরি স্বর্ণ ও নগদ লাখ টাকা ছিনতাই করা হয়েছে। আনোয়ার ছিনতাইকারীদের আক্রমণে গুরুতর আহত হন এবং কয়েক দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
পুলিশের অভিযান ও তদন্তের অগ্রগতি
রামপুরা থানার ওসি আতাউর রহমান আকন্দ জানান, গ্রেপ্তারকৃতদের তিন দিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে এবং বাকি আসামিদের গ্রেপ্তার ও লুণ্ঠিত স্বর্ণ উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।