বাংলাদেশে স্থলভাগে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণে চীন ও জাপানের আগ্রহ
বাংলাদেশে স্থলভাগে এলএনজি (লিকুইফাইড ন্যাচারাল গ্যাস) টার্মিনাল নির্মাণে চীন ও জাপানের দুটি কোম্পানি আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ইতোমধ্যে তারা সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব জমা দিয়েছে।
জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চীনের চায়না ন্যাশনাল কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্টারন্যাশনাল করপোরেশন লিমিটেড (সিএনসিইসি ইন্টারন্যাশনাল) এবং জাপানের জেরা নামে দুটি প্রতিষ্ঠান এ প্রকল্পে বিনিয়োগে আগ্রহী। সিএনসিইসি ইন্টারন্যাশনালের প্রস্তাব ইতোমধ্যে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) কর্তৃপক্ষের কাছে মূল্যায়নের জন্য পাঠানো হয়েছে, এবং জেরার প্রস্তাবও শিগগিরই পর্যালোচনা করা হবে।
জাপানি কোম্পানি জেরা ৩ মার্চ বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা বরাবর একটি চিঠিতে এ প্রস্তাব দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজিং এক্সিকিউটিভ অফিসার ইজুমি কাই স্বাক্ষরিত ওই চিঠির অনুলিপি বাংলাদেশে জাপান দূতাবাস, বিডা, পেট্রোবাংলা এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়েছে। জেরা মনে করে, বাংলাদেশে টেকসই ও স্থায়ী জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে এ প্রকল্প প্রয়োজন। তারা ২-৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে, যেখানে জাপান ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন (জেবিআইসি) বা অন্যান্য উন্নয়ন সংস্থাগুলোও অর্থায়নে যুক্ত হতে পারে।
অন্যদিকে, চীনের সিএনসিইসি ইন্টারন্যাশনাল ১৩ ফেব্রুয়ারি জ্বালানি বিভাগের সচিব বরাবর একটি চিঠির মাধ্যমে তাদের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। চিঠিতে প্রতিষ্ঠানটির পূর্ব অভিজ্ঞতা, আর্থিক সক্ষমতা এবং প্রকল্প বাস্তবায়নের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে।
সরকার বর্তমানে পিপিপি ভিত্তিতে স্থলভাগে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা করছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশে জ্বালানি সরবরাহের নিরবচ্ছিন্নতা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মনে করছে। মাতারবাড়ীতে এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট সরবরাহ সক্ষমতার একটি স্থলভিত্তিক এলএনজি টার্মিনালের পরিকল্পনা আগের সরকার গ্রহণ করেছিল। তবে বর্তমান প্রস্তাব অনুযায়ী, এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ২-৩ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে।
পেট্রোবাংলার সহযোগী প্রতিষ্ঠান রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (আরপিজিসিএল) এ প্রকল্প বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দিচ্ছে। তবে, সরকার যদি এটি জিটুজি ভিত্তিতে করতে চায়, তাহলে আরপিজিসিএল সে অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
জ্বালানি বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, চীন ও জাপানের দুটি কোম্পানির প্রস্তাব বিশ্লেষণ করা হচ্ছে এবং পিপিপি ভিত্তিতে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা রয়েছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে প্রকল্পের পরবর্তী ধাপে এগোনো হবে।
বাংলাদেশে স্থলভাগে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের জন্য আগে বেশ কয়েকটি কোম্পানি আগ্রহ প্রকাশ করেছিল, তবে প্রকল্প বাস্তবায়নে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের কারণে তা এখনো আলোর মুখ দেখেনি। বর্তমান প্রস্তাবগুলোর মূল্যায়নের পর, সরকার যদি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে বিদেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে এ খাতের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।