রোজা: ধৈর্য, সহিষ্ণুতা ও সমাজকল্যাণের পথ
রমজান মাসে রোজা রাখা একটি মহান ইবাদত, যা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে ধৈর্য ধারণের শিক্ষা দেয়। রোজাদার ব্যক্তি এই মাসে খাবার, পানীয় এবং সব ধরনের পাপকাজ থেকে বিরত থাকে, যা তাকে সহিষ্ণুতা এবং কষ্ট সহ্য করার অনুশীলন করায়। আল্লাহ তাআলা এই মাসে মুমিনদের উদারতা, সততা, ধৈর্য এবং সহনশীলতার প্রদর্শন করতে নির্দেশ দিয়েছেন। রোজার মাধ্যমে ধৈর্য ধারণ করে আল্লাহর অফুরন্ত রহমত লাভ করা সম্ভব, এবং সবরের বিনিময়ে জান্নাতের প্রতিদান পাওয়া যায়, যেমনটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে উল্লেখ করেছেন।
রোজা শুধুমাত্র খাবার বা পানীয় থেকে বিরত থাকার বিষয় নয়; এটি আমাদের চরিত্র ও কুপ্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণের সুযোগ দেয়। রোজার মাধ্যমে অঙ্গপ্রত্যঙ্গের অতিরিক্ত চাহিদা যেমন চোখ, কান, জিহ্বা ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণে থাকে, যার ফলে মানুষ কুপ্রবৃত্তির উপর জয়ী হয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করে এবং তার অন্তরের মলিনতা ও কুটিলতা দূর হয়। রোজা ব্যক্তির অন্তরে দরিদ্রের প্রতি সহানুভূতি সৃষ্টি করে, যা সমাজে দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য সহায়তা প্রদান করে।
হাদিসে এসেছে, রোজাদারের জন্য জান্নাতে একটি বিশেষ দরজা রয়েছে, “রাইয়ান”, যা শুধুমাত্র রোজাদাররা প্রবেশ করতে পারবেন। চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা বলেছেন, নিয়মিত রোজা পালনের ফলে শরীরের বিভিন্ন রোগ ও জীবাণু ধ্বংস হয়, এবং মানসিক প্রশান্তি লাভ হয়। রোজা পালন মানুষকে আল্লাহ ও বান্দার অধিকার আদায়ে যোগ্য করে তোলে।
রমজান মাসে, সারাদিন পানাহার পরিত্যাগ করা, শারীরিক ও মানসিক কষ্ট সহ্য করা, দীর্ঘ সময় মসজিদে দাঁড়িয়ে তারাবি নামাজ পড়া—এসব ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা অর্জনের প্রশিক্ষণ। সওয়াবের আশায় এই কষ্ট সহ্য করা হয়, কারণ সওয়াব কষ্টের অনুপাতেই বৃদ্ধি পায়। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে শরীয়তের বিধান পালন ও ধৈর্য ধারণের মাধ্যমে মানুষ পরিপূর্ণ ইবাদত করতে শিখে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “রোজাদার যেন অশ্লীল কথা না বলে এবং ঝগড়া-বিবাদে না লিপ্ত হয়।” মাহে রমজানে ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা অর্জন করে মানুষ নিজের এবং সমাজের কল্যাণে কাজ করতে পারে। আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেছেন, “ধৈর্যশীলদের তাদের ধৈর্যের প্রতিদান পরিপূর্ণভাবে দেওয়া হবে।”
রোজা কেবল ব্যক্তিগত কল্যাণের জন্য নয়, বরং এটি মুসলমান সমাজের জন্য একটি দলগত কল্যাণ বয়ে আনে, যা ঈমানদারের সমষ্টিগত জীবনে শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে।