বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভোটারের ন্যূনতম বয়স সম্পর্কে নানা ধরণের বিধান রয়েছে, যা দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক এবং সাংবিধানিক কাঠামোর ওপর নির্ভর করে। বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে ভোটারের ন্যূনতম বয়স কমানোর বিষয়ে তীব্র আলোচনা চলছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ভোটারের ন্যূনতম বয়স ১৬ বছর করার প্রস্তাব দিয়েছে, যা দেশের রাজনৈতিক পরিসরে নতুন এক বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভোটারের ন্যূনতম বয়স ১৭ বছর করার প্রস্তাব দিয়েছেন।
বাংলাদেশে এ প্রস্তাবের প্রতি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বিরোধিতা রয়েছে, তবে এই বিষয়ের প্রতি বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মতভেদ দেখা যাচ্ছে। ভোটারের ন্যূনতম বয়স কমানোর পক্ষে এনসিপি বলছে, তরুণদের দেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়ার মাধ্যমে তাদের রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে। সংগঠনটির মতে, যেহেতু তরুণরা বর্তমানে সমাজের অনেক গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করছে, তাদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত রাখা হবে অযৌক্তিক।
বিশ্বের নানা দেশে ভোটারের বয়সের সীমা ভিন্ন ভিন্ন। বেশিরভাগ দেশে ভোটারের ন্যূনতম বয়স ১৮ বছর, তবে কিছু দেশে এটি ১৬ বছরও হতে পারে। যেমন, ব্রাজিল, অস্ট্রিয়া, কিউবা, স্কটল্যান্ড, আর্জেন্টিনা, নিকারাগুয়াসহ বেশ কিছু দেশে ১৬ বছর বয়সীরা ভোট দিতে পারেন। অন্যদিকে, পূর্ব তিমুর, ইন্দোনেশিয়া, উত্তর কোরিয়া ও সুদানের মতো দেশগুলোতে ভোটের বয়স ১৭ বছর। তবে, ১৮ বছরের বয়সের নিচে ভোট দেওয়া হলেও কিছু দেশে শুধুমাত্র সীমিত ভোটাধিকার প্রদান করা হয়, যেমন স্লোভেনিয়ায় চাকরিজীবী ১৬ বছর বয়সীরা ভোট দিতে পারেন।
তবে, ভোটারের বয়স কমানোর বিপক্ষে যেসব যুক্তি তুলে ধরা হচ্ছে, তা মূলত কম বয়সীদের শারীরিক ও মানসিক পরিপক্বতার অভাবের সঙ্গে সম্পর্কিত। অনেকেই মনে করেন যে, ১৬ বা ১৭ বছর বয়সীরা রাজনৈতিক বিষয়গুলো সম্পর্কে যথেষ্ট পরিপক্ব নয় এবং তারা সহজেই প্রভাবিত হতে পারে। অন্যদিকে, ভোট দেওয়ার জন্য একজন নাগরিকের মধ্যে একটি যথাযথ দায়িত্ববোধ থাকা উচিত, যা কম বয়সীদের মধ্যে নাও থাকতে পারে।
এছাড়া, শিক্ষাব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা ও রাজনৈতিক সচেতনতার অভাবও একটি বড় কারণ, যার মাধ্যমে অপ্রাপ্তবয়স্কদের ভোটের অধিকার কমিয়ে দেওয়ার পক্ষেই যুক্তি তোলা হয়।
সর্বোপরি, ভোটারের ন্যূনতম বয়স কমানো নিয়ে বাংলাদেশে ব্যাপক বিতর্ক চললেও, বিভিন্ন দেশের উদাহরণ এবং বিশেষজ্ঞদের মতামতগুলির ভিত্তিতে এটি একটি জটিল এবং বহুমাত্রিক বিষয় হিসেবে উঠে এসেছে।