প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের পরবর্তী নির্বাচন নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এ বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং এটি দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে। নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে।
জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে, প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তিনি আশা করেন যে রাজনৈতিক দলগুলো ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার সাথে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করবে এবং তাদের প্রস্তুতি আরও ত্বরান্বিত হবে। এ সময় তিনি বলেন, “গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ ও জনগণের ভোটাধিকারের নিশ্চয়তা প্রদানের জন্য আমাদের সকলকে একযোগভাবে কাজ করতে হবে।”
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, জুলাই মাসে সফলভাবে প্রথম পর্ব সম্পন্ন হওয়া অভ্যুত্থান এখন দ্বিতীয় পর্বে প্রবেশ করেছে। তিনি জনগণকে গুজব ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “গুজবের মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন ও নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এসব অপপ্রচার রোধে আমাদের সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।” তিনি আরও জানান, দুর্নীতিপরায়ণ শক্তি এসব গুজবের মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করার চেষ্টা করছে, তবে তারা সফল হতে পারবে না।
প্রধান উপদেষ্টা ভাষণে আরও জানান, বর্তমান সরকারের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ফলে দেশের অর্থনীতিতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার দৃঢ় পদক্ষেপ নিয়েছে, বিশেষ করে রমজান ও ঈদুল ফিতরের সময়। তিনি বলেন, “সরকারের নীতি অনুসারে দ্রব্যমূল্য কমানো সম্ভব হয়েছে এবং জনগণ স্বস্তি পেয়েছে। আমরা মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে সক্ষম হবো।”
তিনি আরও বলেন, দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের সুফল পাওয়া যাচ্ছে। প্রবাসী রেমিট্যান্স থেকে প্রাপ্ত আয় দেশকে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করছে। ফেব্রুয়ারিতে রেমিট্যান্স প্রবাহ আড়াই বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে, যা এক মাসে সর্বোচ্চ বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে প্রবাসীদের জন্য সহজতর প্রক্রিয়া তৈরি করা হচ্ছে, যাতে তাদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা যায়।
অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, সরকার ব্যাংকিং ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছে, কারণ পূর্ববর্তী সরকারের আমলে ব্যাংকিং খাতে বিশৃঙ্খলা ও লুটপাট ঘটেছিল। বর্তমানে সরকার ব্যাংকিং খাতে আস্থা ফিরিয়ে আনতে সফল হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, “গত ১৫ বছরে ২৩৪ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার হয়েছে।” এই পাচারের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা বাড়ানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের মধ্যে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য স্টারলিংকের কার্যক্রম শুরু করা, দেশের ইন্টারনেট অবকাঠামো উন্নয়ন, এবং চীনের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক জোরদার করা। তিনি বলেন, “চীনের বৃহত্তম সোলার প্যানেল নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে কারখানা স্থাপন করতে আগ্রহী, যা বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নয়নে সহায়তা করবে।”
প্রধান উপদেষ্টা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা দুর্নীতি। এর কারণে শুধু সরকার ও জনগণের আস্থা হারানো হয়নি, বরং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যেও বড় ক্ষতি হয়েছে।” সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়া, এবং দেশবাসীকে সততার পথে চলতে উদ্বুদ্ধ করা।
শেষে, প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উন্নত হবে এবং নারীদের অধিকার সুরক্ষা, সংখ্যালঘুদের নাগরিক অধিকার এবং সমাজে বৈষম্য দূর করার ক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা অব্যাহত থাকবে। তিনি আরও বলেন, “রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা এবং দেশকে একটি উন্নত, সুশৃঙ্খল এবং উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিণত করা আমাদের লক্ষ্য।