টাইম ম্যাগাজিনের স্বীকৃতি পেল আশুলিয়ার জেবুন নেসা মসজিদ
ঢাকার ব্যস্ত সড়ক পেরিয়ে আশুলিয়ার জেবুন নেসা মসজিদের সবুজ উঠানে পা রাখলেই মনে হয়, এক অন্য জগতে চলে এসেছি। তৈরি পোশাক কারখানার ভেতরে এমন প্রশান্তিময় স্থাপত্য যেন প্রকৃতির সাথেই মিশে আছে।
জেবুন নেসা মসজিদ, যা আইডিএস গ্রুপের তৈরি পোশাক কারখানার প্রাঙ্গণে অবস্থিত, প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের কোনো স্থাপনা হিসেবে টাইম ম্যাগাজিনের “দ্য ওয়ার্ল্ডস গ্রেটেস্ট প্লেসেস অব ২০২৫”-এ জায়গা পেয়েছে। এ স্বীকৃতি বাংলাদেশের স্থাপত্যশিল্পের জন্য এক বিশাল অর্জন।
স্থাপত্যশৈলী ও নকশার বিশেষত্ব
মসজিদটির স্থপতি সায়কা ইকবাল এর নকশায় স্থানীয় ঐতিহ্য ও পরিবেশকে গুরুত্ব দিয়েছেন। এটি মনোলিথিক ডিজাইনে তৈরি, যেখানে এক রঙের (মনোক্রোম) ব্যবহার ইসলামের একত্ববাদের প্রতিফলন ঘটায়। টেরাকোটার অনুপ্রেরণায় লালচে গোলাপি রঙের মসজিদটি স্থানীয় উপকরণ দিয়ে তৈরি। গম্বুজের ভেতর দাঁড়ালে এক প্রশান্তির অনুভূতি জাগে, আর সামনে তাকালেই দেখা যায় পাশের বিশাল লেকের মনোরম দৃশ্য।
নারীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা
মসজিদে প্রবেশের পথে সিঁড়ির পাশে ছাতিমগাছ ঘেরা একটি পথ রয়েছে, যা নারীদের নামাজের স্থানের দিকে নিয়ে যায়। এখান থেকেই পশ্চিম পাশের লেকের সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করা যায়।
প্রাকৃতিক আলো-বাতাসের ব্যবস্থাপনা
ইসলামি স্থাপত্যের জালি ব্যবস্থার অনুকরণে মসজিদে প্রাকৃতিক বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, ফলে এখানে কোনো শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের প্রয়োজন হয় না। পাশাপাশি, বিভিন্ন স্থানীয় গাছপালা—শিমুল, লেমনগ্রাস, রেইন লিলি, বাঁশঝাড়—পরিবেশকে করে তুলেছে আরও মনোরম।
বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত স্থাপত্য
টাইম ম্যাগাজিনের স্বীকৃতির পাশাপাশি মসজিদটি পেয়েছে ভারতের জেকে সিমেন্ট আর্কিটেক্ট অব দ্য ইয়ার সম্মাননা, ডিজিনের “টপ ফাইভ সিভিক প্রজেক্টস”, এবং আর্ক ডেইলির “টপ ফাইভ রিলিজিয়াস প্রজেক্ট” স্বীকৃতি।
এই মসজিদ শুধু ধর্মীয় উপাসনালয় নয়, বরং শিল্প, প্রকৃতি ও স্থাপত্যের এক অনন্য মেলবন্ধন, যা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করছে।