বাংলাদেশের আসিয়ানে সদস্যপদ পাওয়ার আগ্রহ বহু বছর ধরে রয়েছে। দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী আঞ্চলিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংস্থা হিসেবে পরিচিত অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথইস্ট এশিয়ান নেশনস (আসিয়ান) প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৬৭ সালে। আসিয়ান গঠন করা হয়েছিল দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করার উদ্দেশ্যে এবং শান্তি ও নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য। বর্তমানে আসিয়ানের সদস্য দেশগুলোর সংখ্যা ১০টি। এই দেশগুলো হলো—ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ব্রুনেই, ভিয়েতনাম, লাওস, মিয়ানমার এবং কম্বোডিয়া।
বাংলাদেশের আসিয়ানের সদস্যপদ লাভের লক্ষ্য বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক থেকে দেশটির জন্য লাভজনক হতে পারে। বাংলাদেশ, যেহেতু দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার অংশ এবং বৈশ্বিক বাণিজ্যে ক্রমবর্ধমান অবস্থানে রয়েছে, আসিয়ানে যোগদান করলে দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের প্রসার ঘটবে। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ প্রধানত আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর থেকে আমদানিনির্ভর, তবে আসিয়ানের সদস্যপদ লাভের মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধি পেতে পারে এবং ভারতের ওপর নির্ভরশীলতা কিছুটা কমতে পারে।
বাংলাদেশের বাণিজ্য ক্ষেত্রে, আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোতে রপ্তানির পরিমাণ একদিকে সীমিত, তবে আমদানি দেশগুলোর পণ্য থেকে বাংলাদেশ বছরে হাজার কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করে। ২০২২–২৩ অর্থবছরে আসিয়ানের দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ ১,১৩৫ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য আমদানি করেছিল, যেখানে রপ্তানি মাত্র ৭৬ কোটি ডলার। এর ফলে আসিয়ানের সদস্য হয়ে, বাংলাদেশ এই বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে সক্ষম হতে পারে। বিশেষত, বাণিজ্য চুক্তি ও মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) মাধ্যমে বাংলাদেশ উপকৃত হতে পারে।
বাংলাদেশের আসিয়ানে যোগদান কার্যক্রম গত কয়েক বছরে ত্বরান্বিত হয়েছে। ২০২৩ সালের শুরুতে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের অধীনে, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক আরও জোরদার করার জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। রাষ্ট্রপতি মুহাম্মদ ইউনূস গত জানুয়ারিতে ডাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সম্মেলনে মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন এবং এই ইস্যুতে তাদের সহযোগিতা চেয়েছেন। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমও বাংলাদেশকে আসিয়ানে সদস্যপদ পাওয়ার ক্ষেত্রে সহায়তা করেছেন।
বাংলাদেশ আসিয়ানে যোগ দিলে এর অন্যতম লাভ হবে ব্যাপকভাবে বিনিয়োগ বৃদ্ধি। আসিয়ানের সদস্যদেশগুলোর সামষ্টিক দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) চার ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি। একে যদি একক সত্তা হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তবে আসিয়ান হবে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি। বাংলাদেশকে আসিয়ানের অংশ হয়ে এর বাজারে প্রবেশাধিকার এবং বিনিয়োগের সুযোগ বাড়বে। এ ছাড়া, বাংলাদেশ নিজেই বৃহত্তম বিনিয়োগকারী হিসেবে দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে।
আসিয়ানে সদস্যপদ অর্জন বাংলাদেশকে বৈশ্বিক পটভূমিতে আরও শক্তিশালী করে তুলবে। এটি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং কূটনীতির ক্ষেত্রে একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে কাজ করবে। বিশেষত, এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে বাংলাদেশের ভূমিকা আরও দৃঢ় হবে। তবে মিয়ানমারের কিছু বিরোধিতা রয়েছে, যার কারণে সদস্যপদ লাভের প্রক্রিয়া কিছুটা ধীর হতে পারে। তবে, বাংলাদেশ যদি সফলভাবে আসিয়ানের সদস্যপদ অর্জন করতে পারে, তবে তা দেশের অর্থনীতি এবং বাণিজ্য ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।