ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে রোডম্যাপ দাবি বিএনপি ও হেফাজতের
চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের জন্য স্পষ্ট রোডম্যাপ প্রণয়নের আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি ও হেফাজতে ইসলাম। শনিবার রাতে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে দুই দলের নেতাদের মধ্যে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এই বিষয়ে ঐক্যমত্যে পৌঁছায় তারা।
বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, দ্রুত একটি নির্বাচন রোডম্যাপ ঘোষণা করার জন্য প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে, যাতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই নির্বাচন সম্পন্ন করা যায়।
রাজনৈতিক ঐকমত্য ও আলোচনা
রাত ৮টা থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টা চলা এই বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ নেতারা অংশ নেন। আলোচনায় উঠে আসে আগের সরকার আমলে হেফাজতের ওপর চালানো নিপীড়ন, বিভিন্ন মামলা এবং ২০১৩ ও ২০২১ সালে সংঘটিত সহিংস ঘটনার বিচার দাবির প্রসঙ্গ।
সালাহউদ্দিন বলেন, “আমরা শুধুমাত্র সংস্কারের কথা বলছি না, সেইসাথে অতীতের গণহত্যার বিচারও চাই। তবে গণতান্ত্রিক উত্তরণের প্রক্রিয়া আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার।”
তিনি জানান, হেফাজতে ইসলামও ডিসেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে একমত হয়েছে এবং তারা প্রয়োজনীয় কর্মসূচি নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছে।
নির্বাচন বিলম্বের আশঙ্কা
বিএনপি নেতা অভিযোগ করেন, নির্বাচনের সময় নিয়ে বিভিন্ন মহল পরিকল্পিতভাবে বিলম্ব ঘটানোর চেষ্টা করছে। “প্রধান উপদেষ্টা এর আগেও জাতির সামনে ডিসেম্বরে নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, কিন্তু সময়সীমা নিয়ে এখন ঘন ঘন পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে।”
হেফাজতের দাবি ও বিএনপির সমর্থন
বৈঠকে হেফাজতের পক্ষ থেকে ২০১৩ সালের শাপলা চত্বর ও ২০২১ সালের চট্টগ্রাম-ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সংঘটিত ঘটনাগুলোর নিরপেক্ষ বিচার দাবি করা হয়। সালাহউদ্দিন বলেন, “এই হত্যাকাণ্ডের মামলা এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। আমরা চাই দ্রুত ও সুষ্ঠু বিচার হোক।”
এছাড়া হেফাজত নেতারা আলেম-উলামাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানায়, যেখানে বিএনপি পূর্ণ সমর্থন জানায়।
আওয়ামী লীগের বিচার দাবিতে ঐকমত্য
বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন অভিযোগ করেন, “আওয়ামী লীগ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে লিপ্ত হয়েছে। তাদের বিচার সংবিধানের ৪৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী করার জন্য আমরা আইন সংশোধনের প্রস্তাব দিয়েছি।”
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সংস্কার প্রস্তাব
আলোচনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রমে অগ্রগতি না থাকায় হতাশা প্রকাশ করা হয়। দ্রুত বিচার নিশ্চিতে ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা ও সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রস্তাব দেওয়া হয়। “প্রয়োজনে বিভাগীয় শহরগুলোতেও ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করা যেতে পারে,” বলেন সালাহউদ্দিন।
বৈঠকে অংশ নেওয়া নেতারা
হেফাজতে ইসলামের পক্ষে প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন সংগঠনের মহাসচিব মাওলানা সাজেদুর রহমান। সঙ্গে ছিলেন নায়েবে আমির আহমেদ আবদুল কাদের, মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া, মাওলানা মহিউদ্দিন রব্বানী, মাওলানা জুনাইদ আল হাবিব, মাওলানা মাহফুজুল হক, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী এবং মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী।