মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার সংঘাতপূর্ণ এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন। সোমবার (১৪ এপ্রিল) দুপুরে রাজৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাহফুজুল হক এক লিখিত আদেশের মাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করেন।
লিখিত আদেশে উল্লেখ করা হয়, রাজৈর বাজার সংলগ্ন পশ্চিম রাজৈর ও বদরপাশা গ্রামের মধ্যে বিগত সাত দিন ধরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ধারাবাহিকভাবে সংঘর্ষ, দেশীয় অস্ত্রের মহড়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ এবং বিভিন্ন ধরনের সহিংস কর্মকাণ্ড সংঘটিত হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৪ ধারা অনুযায়ী আগামী ১২ ঘণ্টার জন্য (দুপুর ১টা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত) রাজৈর বাজার, পশ্চিম রাজৈর, বদরপাশা ও গোপালগঞ্জ এলাকায় একাধিক ব্যক্তির জমায়েত, সভা-সমাবেশ, শোভাযাত্রা, মাইক ব্যবহার এবং লাঠি-সোটা বা আগ্নেয়াস্ত্র বহন নিষিদ্ধ করা হয়।
তবে জরুরি পরিষেবা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ক্ষেত্রে এই নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না বলে জানানো হয়।
রাজৈর ইউএনও মাহফুজুল হক জানান, যেকোনো মুহূর্তে পুনরায় সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে। পরিস্থিতি শান্ত রাখতেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কেউ আইন লঙ্ঘন করলে ১৪৪ ধারার আওতায় কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পূর্ব বিরোধের জেরে পশ্চিম রাজৈর ও বদরপাশা গ্রামের মধ্যে টানা দুই দিন ধরে দফায় দফায় সংঘর্ষ চলছে। পুলিশ এরই মধ্যে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালালেও রোববার (১৩ এপ্রিল) রাতে রাজৈর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ফের উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। ওই সময় পশ্চিম রাজৈরের মজুমদারকান্দি গ্রামের লোকজনের একটি জমায়েত ভাঙতে গেলে পুলিশের ওপর হামলা চালায় উত্তেজিত জনতা। হামলায় পুলিশের দুটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয় এবং এসআই মোস্তফা ও গাড়িচালক শাহাবুদ্দিন গুরুতর আহত হন।
এর আগে, স্থানীয় বিএনপি নেতাদের উদ্যোগে উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনার চেষ্টা হলেও তা ব্যর্থ হয়। রোববার (১২ এপ্রিল) সন্ধ্যায় উসকানিমূলক বক্তব্যের কারণে আবারও দুই পক্ষ দেশীয় অস্ত্রসহ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। বদরপাশা পক্ষ থেকে ককটেল বিস্ফোরণ এবং দোকানে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। ১২টি দোকানে ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে পরে সেনাবাহিনীর সহায়তা নেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে ফায়ার সার্ভিস ও র্যাবের যৌথ প্রচেষ্টায়।
দ্বিতীয় দিনের সংঘর্ষে মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম, রাজৈর থানার ওসি ও একাধিক পুলিশ সদস্যসহ প্রায় ৫০ জন আহত হন। গুরুতর আহতদের ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের পায়ে অপারেশন করা হয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত ঘটে ২ এপ্রিল, যখন ফুচকা ব্রিজ এলাকায় বাজি ফাটানো নিয়ে জুনায়েদ আকন ও জোবায়ের খানের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। পরদিন জোবায়েরকে মারধর করে তার পা ভেঙে দেওয়া হয়। পরে জোবায়েরের ভাই থানায় মামলা করলে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়ে ওঠে। শেষ পর্যন্ত দুই গ্রামের মধ্যে খণ্ডযুদ্ধ শুরু হয়, যা থামাতে সেনাবাহিনী ও পুলিশকে হস্তক্ষেপ করতে হয়।