অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের লাগাতার বিমান হামলা থামার কোনো লক্ষণ নেই। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে কমপক্ষে ৩৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১১৮ জন।
ফলে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি সামরিক অভিযান থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ হাজার ৯৮৩ জনে। এই তথ্য জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
সোমবার (১৪ এপ্রিল) বার্তাসংস্থা আনাদোলুর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে জানানো হয়, আহতদের মধ্যে অনেকেই গুরুতর অবস্থায় আছেন। এখন পর্যন্ত মোট আহত হয়েছেন ১ লাখ ১৬ হাজার ২৭৪ জন। বাস্তব চিত্র আরও করুণ—ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো বহু মানুষ চাপা পড়ে আছেন, যাদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলার পর ইসরায়েল ব্যাপক সামরিক প্রতিক্রিয়ায় যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি একটি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় ইসরায়েল। তবে মার্চের মাঝামাঝি সময়ে ফের উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি।
হামাসের সঙ্গে গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার ইস্যুতে মতানৈক্যের জেরে ১৮ মার্চ থেকে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে ইসরায়েল নতুন করে হামলা শুরু করে। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত আরও ১ হাজার ৬১৩ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ৪ হাজার ২০০ জনের বেশি।
জাতিসংঘের তথ্যমতে, চলমান এই আগ্রাসনের ফলে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। অঞ্চলটির অন্তত ৬০ শতাংশ অবকাঠামো সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়েছে বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে—এর মধ্যে রয়েছে হাসপাতাল, স্কুল, আবাসিক ভবন ও পানি-বিদ্যুৎ সরবরাহের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাও।
গাজায় ইসরায়েলের এই বর্বর আগ্রাসন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তীব্র নিন্দার মুখে পড়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গত বছর নভেম্বরে গাজায় সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তার তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।
এছাড়া, আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে মামলাও চলমান রয়েছে।
এই মানবিক সংকটের প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে এবং গাজার নিরীহ মানুষের জন্য জরুরি মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করার অনুরোধ জানিয়েছে। তবে অবরুদ্ধ পরিবেশ ও অব্যাহত হামলার কারণে সেই সহায়তা পৌঁছানোও হয়ে উঠেছে দুঃসাধ্য।