Saturday, April 19, 2025
spot_imgspot_img
Homeজাতীয়ডিসেম্বরে নির্বাচন চায় বিএনপি, সরকারকে চাপ বাড়াতে বৈঠক-কৌশল জোরদার

ডিসেম্বরে নির্বাচন চায় বিএনপি, সরকারকে চাপ বাড়াতে বৈঠক-কৌশল জোরদার

বিএনপি আগামী জাতীয় নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না পাওয়ায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি চাপ অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ডিসেম্বরেই নির্বাচন দেখতে চাওয়া দলটি এবার নতুন কৌশল গ্রহণ করেছে। এর অংশ হিসেবে, ফ্যাসিবাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দল এবং যারা এখনও ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের বাইরে রয়েছে, এমন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠকে বসবে বিএনপি।

এই কর্মসূচি আজ শনিবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ১২ দলীয় জোট ও এলডিপির সঙ্গে আলাদা বৈঠকের মাধ্যমে শুরু হচ্ছে। এক থেকে দুই সপ্তাহব্যাপী চলা এই আলোচনার শেষে চলতি মাসের শেষদিকে অথবা আগামী মাসের শুরুতে ঢাকায় বড় একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করবে বিএনপি। এতে সরকারকে বার্তা দেওয়া হবে যে, দেশের বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত এবং তারা চলতি বছরের ডিসেম্বরেই নির্বাচন চায়।

এর মাধ্যমে রাজনৈতিক ঐক্যমতের আবহ তৈরি করে সরকারকে মনস্তাত্ত্বিকভাবে চাপ দিতে চায় বিএনপি। সূত্রমতে, বিএনপি আগামী দুই মাসের মধ্যে সরকারের পদক্ষেপ পর্যবেক্ষণ করবে। যদি দেখা যায় সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর দাবি উপেক্ষা করে, তাহলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত ও অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের।

বিএনপি দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন সভা-সেমিনারের মাধ্যমে নির্বাচনকালীন সময় ও সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়ে আসছে। এমন প্রেক্ষাপটে প্রধান উপদেষ্টা জানিয়েছেন, ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। তবে দলগুলোর সংস্কারের মাত্রা অনুযায়ী সময় নির্ধারিত হবে। বিএনপি মনে করে, প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রম শেষ করে ডিসেম্বরেই নির্বাচন করা সম্ভব এবং জুন পর্যন্ত গড়ানো মানে শুধু সময়ক্ষেপণ।

এই প্রেক্ষাপটে গত বুধবার সরাসরি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি স্পষ্ট জানতে চায় বিএনপি। তবে প্রত্যাশিত বার্তা না পাওয়ায় তারা হতাশ। বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, উপদেষ্টার বক্তব্য তাদের আশানুরূপ হয়নি। তারা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ডিসেম্বরই তাদের ‘কাটঅফ টাইম’।

বর্তমান পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণে বিএনপির স্থায়ী কমিটি জরুরি বৈঠকে বসে। সেখানে আলোচনার মূল বিষয় ছিল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের ফলাফল। বৈঠকে নেতারা মনে করেন, সরকারের বক্তব্যে নির্বাচন নিয়ে আন্তরিকতা বা জরুরি মনোভাব দেখা যায়নি। বরং উপদেষ্টাদের শরীরী ভাষা দেখে মনে হয়েছে, নির্বাচন আগামী বছরের ডিসেম্বরেও গড়ালেও তাদের কিছু আসে যায় না।

স্থায়ী কমিটির সদস্যদের অনেকেই মনে করেন, সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে নির্বাচন বিলম্বিত করতে চায়। তাই বিএনপির জন্য এখন সরকারের ওপর চাপ বাড়ানো ছাড়া আর কোনো পথ নেই। যদিও দলটি এখনই বড় কোনো কর্মসূচিতে যেতে চায় না, কারণ তারা মনে করে—সরকার এখনো পুরোপুরি ব্যর্থ হয়নি এবং তাদের সহযোগিতায় একটি সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব।

জামায়াতে ইসলামীর সদ্য ঘোষিত ‘রমজানের আগেই নির্বাচন’ দাবিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে বিএনপি। যদিও দুই দলের মধ্যে দীর্ঘদিন রাজনৈতিক দূরত্ব ছিল, তবে নির্বাচনী সময়সূচি নিয়ে তাদের অবস্থান এখন কাছাকাছি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, লন্ডনে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে জামায়াতের নেতাদের সাম্প্রতিক বৈঠকের পরই এ অবস্থান পরিবর্তন হয়েছে।

সব মিলিয়ে, বিএনপি মনে করছে নির্বাচন ইস্যুতে ঐকমত্য গড়ে তুলে সরকারকে চাপ দেওয়ার কৌশলই এখন সবচেয়ে কার্যকর পথ। তবে ডিসেম্বরের বাইরে সময় গড়ালে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে বলে দলটির শীর্ষ নেতাদের অভিমত।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

Most Popular

Recent Comments