দখলদার ইসরায়েলের অবৈধ বসতিস্থাপনকারীরা মুসলিমদের তৃতীয় পবিত্র স্থান আল-আকসা মসজিদ গুঁড়িয়ে সেখানে একটি ইহুদি উপাসনালয় নির্মাণের ষড়যন্ত্র করছে। হিব্রু ভাষার একাধিক অনলাইন প্ল্যাটফর্মে এ নিয়ে ইতোমধ্যে সক্রিয়ভাবে আলোচনা চলছে। এই প্রেক্ষাপটে ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র ও প্রবাসী বিষয়ক মন্ত্রণালয় সতর্কতা জারি করেছে।
শনিবার (১৯ এপ্রিল) আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, ফিলিস্তিনি মন্ত্রণালয় তাদের এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে এ বিষয়ে একটি পোস্ট করে। এতে তারা জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দ্রুত ও কার্যকর হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে।
মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আল-আকসা মসজিদ ভাঙার পরিকল্পনা একেবারে পরিকল্পিত উসকানি এবং জেরুজালেমে ইসলামী ও খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র স্থাপনাগুলোর ওপর এক ধরণের সাংগঠনিক আগ্রাসন। তারা আরও বলেছে, এই কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের শামিল এবং বিষয়টি জাতিসংঘ ও বৈশ্বিক মহলে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা উচিত।
প্রসঙ্গত, ইসরায়েলি অবৈধ বসতি স্থাপনকারীরা প্রায়ই এই পবিত্র প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালায়। নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও তারা সেখানে ধর্মীয় প্রার্থনায় অংশ নেয় এবং এতে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী সরাসরি সহযোগিতা করে।
তারা ফিলিস্তিনিদের ব্যক্তিগত জমি দখল করে বসতি গড়ে তোলে এবং ইসরায়েলি রাষ্ট্রের কাছ থেকে পূর্ণ নিরাপত্তা ও সহযোগিতা পেয়ে থাকে। জেরুজালেমের স্থিতিবস্থা (status quo) অনুযায়ী, আল-আকসা প্রাঙ্গণে অমুসলিমদের প্রার্থনার অনুমতি নেই। তবুও সম্প্রতি সেখানে ইহুদি উপাসকদের উপস্থিতি বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন তাদের লক্ষ্য, ঐতিহাসিক আল-আকসা মসজিদ ভেঙে তথাকথিত ‘থার্ড টেম্পল’ নির্মাণ করা।
অন্যদিকে, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরও ৬৪ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। নিহতদের বেশিরভাগই গাজা সিটি ও উত্তর গাজার বাসিন্দা। শুক্রবার দিনভর ইসরায়েলের বিমান বাহিনী গাজার মধ্য, উত্তর এবং দক্ষিণাঞ্চলে বিস্তৃত হামলা চালায়। বিশেষ করে রাফার শাবৌর এবং তেল আস সুলতান এলাকায় আইডিএফ ঘাঁটি থেকে পরিচালিত হয় এই আক্রমণ।
হামাস এখন আর কোনো অন্তর্বর্তী চুক্তি চায় না। বরং তারা যুদ্ধবিরতি, বন্দি বিনিময় এবং গাজার পুনর্গঠনের ভিত্তিতে পূর্ণাঙ্গ চুক্তির আলোচনার আহ্বান জানিয়েছে। হামাসের রাজনৈতিক নেতা খলিল আল-হায়া এক টেলিভিশন ভাষণে বলেন, নেতানিয়াহু সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আংশিক চুক্তিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে এবং পুরো প্রক্রিয়াটিকে নিজেদের স্বার্থে পরিচালনা করছে। তিনি সাফ জানিয়ে দেন, হামাস এই ধরনের কৌশলগত ফাঁদে পা দিতে চায় না।
এই প্রেক্ষাপটে মিশরের মধ্যস্থতাকারীরা জানুয়ারিতে হওয়া যুদ্ধবিরতি পুনরায় কার্যকর করতে চেষ্টা চালিয়ে গেলেও সফল হওয়ার সম্ভাবনা অনিশ্চিত। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জেমস হিউইট অভিযোগ করেছেন, হামাস আসলে শান্তি নয়, বরং দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতে আগ্রহী। তিনি হুঁশিয়ার করে বলেন, “জিম্মিদের মুক্তি দিন, না হলে চরম পরিণতির জন্য প্রস্তুত থাকুন।”
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইউভ গালান্তও এক বিবৃতিতে বলেন, ইসরায়েল তার যুদ্ধের লক্ষ্য অর্জনে অটল এবং তারা হামাসকে পরাজিত করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
উল্লেখযোগ্যভাবে, শুক্রবার ছিল খ্রিষ্টানদের জন্য পবিত্র দিন গুড ফ্রাইডে। সেই দিনেও ইসরায়েলের হামলা চলমান থাকায় গাজার খ্রিষ্টানরা নিরব-নিভৃতভাবে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করেছে। গাজার একটি চার্চ থেকে ইহাব আয়াদ বলেন, “আগে গুড ফ্রাইডে দিনটা উৎসবমুখর থাকত। এবার কেউ কারও সঙ্গে দেখা করতে পারছে না। কারণ, অধিকাংশ আত্মীয়-পরিজনের বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে।”
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া গাজা যুদ্ধ এখনও অব্যাহত। সর্বশেষ তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত ৫১ হাজারের বেশি মানুষ নিহত ও আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৫৬ শতাংশই নারী ও শিশু। গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস বলছে, এই সংখ্যা ৬১,৭০০ ছাড়িয়েছে, কারণ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া অনেককেও মৃত হিসেবে গণনা করা হচ্ছে।
এই মানবিক সংকট এবং রাজনৈতিক উত্তেজনা নতুন করে মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতাকে চরম অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।