অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান থামার কোনো লক্ষণ নেই। সোমবার (২১ এপ্রিল) একাধিক স্থানে চালানো ভয়াবহ হামলায় আরও ২৯ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন বলে জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা।
সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজা জুড়ে চালানো ধারাবাহিক বিমান ও স্থল অভিযানে নিহতদের মধ্যে শরণার্থী শিবিরে অবস্থানরত নিরীহ মানুষও রয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গাজা শহরের একটি তাঁবু ক্যাম্পে চালানো এক হামলায় অন্তত তিনজন নিহত হন। জানা গেছে, এই হামলার সময় তাঁবুতে আশ্রয় নেওয়া পরিবারগুলো দিনের খাবার সংগ্রহে বা বিশ্রামে ব্যস্ত ছিলেন।
বর্তমানে গাজার পরিস্থিতি কার্যত এক খোলা বন্দিশিবিরে পরিণত হয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনী প্রধান প্রধান সংযোগ সড়কগুলো বন্ধ করে দিয়ে গাজাকে কয়েকটি অংশে বিভক্ত করে ফেলেছে। দখলদার বাহিনী ইতোমধ্যেই গাজার ৬৯ শতাংশ অঞ্চলকে ‘নো-গো জোন’ ঘোষণা করেছে, যেখানে সাধারণ ফিলিস্তিনিরা চলাফেরা তো দূরের কথা, দাঁড়িয়েও থাকতে পারছেন না বলে অভিযোগ।
গাজার পাশাপাশি অধিকৃত পশ্চিম তীরেও ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে ইসরায়েলি সেনারা আরও তিন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে।
এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেই ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলোর দাবি, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকার যুদ্ধবিরতির সময় মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনি বন্দিদের আবারও গ্রেপ্তারের পরিকল্পনা করছে, যা হামাসের ওপর চাপ বৃদ্ধির কৌশল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
অন্যদিকে, লোহিত সাগরের উত্তেজনাও নতুন করে ঘনীভূত হয়েছে। ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিমানবাহী রণতরীতে হামলার দাবি জানালে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়ে। এই ঘটনার জবাবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী হুতিদের বিরুদ্ধে ‘কঠোর জবাব’ দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
তবে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার মানবিক ট্র্যাজেডির মধ্যেও উঠে এসেছে এক আবেগঘন দৃষ্টান্ত। সম্প্রতি প্রয়াত খ্রিষ্টান ধর্মীয় নেতা পোপ ফ্রান্সিসের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছে গাজার ফিলিস্তিনিরা। যুদ্ধকালেও পোপ নিয়মিত ভিডিও বার্তায় গাজার মানুষের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন, যা তাদের হৃদয়ে স্থায়ী জায়গা করে নিয়েছে।
এই চলমান সংঘাতে গাজাবাসীদের প্রতি আন্তর্জাতিক মহলের সমর্থন ও কার্যকর উদ্যোগ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি প্রয়োজন।