Wednesday, April 23, 2025
spot_imgspot_img
Homeআন্তর্জাতিকপোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুতে বিশ্বজুড়ে শোক, শুরু হলো নতুন পোপ নির্বাচনের গোপন প্রক্রিয়া

পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুতে বিশ্বজুড়ে শোক, শুরু হলো নতুন পোপ নির্বাচনের গোপন প্রক্রিয়া

বিশ্ব খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা পোপ ফ্রান্সিস ৮৮ বছর বয়সে ভ্যাটিকানের কাসা সান্তা মার্তা বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসযন্ত্রের জটিলতায় ভুগে আসা পোপ ফ্রান্সিস রোমের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীনও ছিলেন। তার প্রয়াণে বিশ্বজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

বিশ্ব নেতারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ও বিভিন্ন বিবৃতিতে তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ বলেন, “তিনি ছিলেন বিনয়ের প্রতীক, সবসময়ই নিপীড়িতদের পাশে ছিলেন।” ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেইন বলেন, “পোপ তার নম্রতা ও দারিদ্র্যপীড়িত মানুষের প্রতি সহমর্মিতা দিয়ে শুধু ক্যাথলিক সমাজ নয়, গোটা বিশ্ববাসীকে অনুপ্রাণিত করেছেন।”

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গভীর শোক প্রকাশ করে বলেন, “এই মানবিক নেতার মৃত্যুতে বিশ্ব হারালো এক মহান আত্মাকে।” পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক তাকে স্মরণ করেছেন একজন “উষ্ণ, সদয় ও সংবেদনশীল ব্যক্তি” হিসেবে। মিশরের প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তাহ আল-সিসি বলেন, “তিনি ছিলেন শান্তি, ভালোবাসা ও করুণার কণ্ঠস্বর।”

স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজও পোপের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, “সবচেয়ে দুর্বল ও উপেক্ষিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকারের জন্য পোপ ফ্রান্সিস চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।”


গোপন কনক্লেভ: শুরু হলো নতুন পোপ নির্বাচনের প্রস্তুতি

পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুতে ক্যাথলিক চার্চের সর্বোচ্চ নেতার পদ ফাঁকা হওয়ায়, পরবর্তী পোপ নির্বাচনের জন্য ভ্যাটিকানের ঐতিহ্যবাহী ‘কনক্লেভ’ প্রক্রিয়া শুরু হতে যাচ্ছে।

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কার্ডিনালরা ভ্যাটিকানে সমবেত হবেন। পোপ নির্বাচনের গোপন প্রক্রিয়াটিকে বলা হয় ‘কনক্লেভ’—যার লাতিন অর্থ “চাবিসমেত বন্ধ ঘর”। এই বিশেষ বৈঠকে অংশ নিতে পারবেন কেবলমাত্র ৮০ বছরের কম বয়সী কার্ডিনালরা। বর্তমানে এ ধরনের ভোটাধিকারপ্রাপ্ত কার্ডিনালের সংখ্যা প্রায় ১২০ জন। বিশেষ বিষয় হলো, এদের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশই পোপ ফ্রান্সিস নিজে মনোনীত করেছিলেন, ফলে তার উদার ও অন্তর্ভুক্তিমূলক দর্শনের প্রভাব নতুন পোপ নির্বাচনে পরোক্ষভাবে থাকতেই পারে।

সাধারণত পোপের মৃত্যু থেকে ১৫-২০ দিনের মধ্যে কনক্লেভ শুরু হয়। সিস্টিন চ্যাপেলে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে কঠোর গোপনীয়তা বজায় রাখা হয়। ‘Extra omnes’ বা ‘সবাই বের হয়ে যান’ ঘোষণা দেওয়ার পর শুধুমাত্র ভোটার কার্ডিনাল, নির্দিষ্ট কর্মকর্তা এবং চিকিৎসকরা ভেতরে থাকতে পারেন। তখন থেকে বাইরের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়—নিষিদ্ধ হয় মোবাইল, সংবাদপত্র এমনকি ব্যক্তিগত চিঠিও।

ভোটাভুটির দিনগুলোতে কার্ডিনালরা সেন্ট মার্থা হাউসেই অবস্থান করবেন, যেখানে পোপ ফ্রান্সিস নিজে দীর্ঘ ১২ বছর ধরে বাস করতেন। প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে ব্যালটভিত্তিক ভোট হয়। ভোটের পরে ব্যালটগুলো পোড়ানো হয়। কালো ধোঁয়া মানে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি, আর সাদা ধোঁয়া মানে নতুন পোপ নির্বাচিত হয়েছেন।

প্রথম ৩০টি ভোটেও যদি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না আসে, তবে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে নির্বাচিত ব্যক্তি পোপ হিসেবে মনোনীত হন। ভ্যাটিকানের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ কনক্লেভ ছিল ১৯২২ সালে, যা পাঁচ দিন ধরে চলেছিল।


‘Habemus Papam’—নতুন পোপের অভিষেক

পোপ নির্বাচিত হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট কার্ডিনালকে প্রশ্ন করা হয়, তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করবেন কি না এবং তিনি কোন নাম নিতে চান। তারপর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ‘Room of Tears’-এ, যেখানে অপেক্ষায় থাকে নতুন সাদা পোশাক ও লাল স্লিপার। সবশেষে, কার্ডিনালদের ডিন সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকার ব্যালকনিতে এসে জনতার উদ্দেশ্যে ঘোষণা দেন—“Annuntio vobis gaudium magnum: Habemus Papam” অর্থাৎ “আমি তোমাদের মহাসমাচার জানাচ্ছি: আমাদের একজন পোপ আছেন।”

পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন এবং গোপনীয় ধর্মীয় নির্বাচনী প্রক্রিয়া আবারও শুরু হচ্ছে। এখন বিশ্ব তাকিয়ে আছে, কে হবেন ক্যাথলিক চার্চের পরবর্তী পবিত্র অভিভাবক।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

Most Popular

Recent Comments