বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক “ম্যাক্রো পভার্টি আউটলুক” শীর্ষক প্রতিবেদনে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশে চরম দারিদ্র্যের হার বাড়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, দীর্ঘস্থায়ী উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও কর্মসংস্থানের সংকট নিম্ন আয়ের মানুষদের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছে।
বিশ্লেষণে উল্লেখ করা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে দেশের প্রায় ৪ শতাংশ কর্মজীবী মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। একই সময়ে স্বল্প দক্ষ শ্রমিকদের মজুরি ২ শতাংশ এবং দক্ষ কর্মীদের মজুরি ০.৫ শতাংশ কমেছে। এই প্রেক্ষাপটে, চরম দারিদ্র্যের হার ৭.৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ৯.৩ শতাংশে পৌঁছাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতে বহু পরিবার নতুন করে অর্থনৈতিক দুর্দশায় পড়বে।
বিশ্বব্যাংক আরও জানিয়েছে, দেশে দারিদ্র্যের সামগ্রিক হার বাড়ার পাশাপাশি আয়ের বৈষম্যও বিস্তার লাভ করবে। বর্তমানে বৈষম্যের সূচক (জিনি সহগ) চলতি অর্থবছরে ০.৫ পয়েন্ট পর্যন্ত বাড়তে পারে, যা একটি উদ্বেগজনক প্রবণতা নির্দেশ করে।
তবে কিছুটা স্বস্তির জায়গা হিসেবে উঠে এসেছে প্রবাসী আয়ের উপর নির্ভরশীল পরিবারগুলোর তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল অবস্থা। অপরদিকে, দেশের অধিকাংশ পরিবার—বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের—অর্থনৈতিক চাপে পড়ে সঞ্চয় ভেঙে খরচ করতে বাধ্য হচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, প্রতি পাঁচটি পরিবারের মধ্যে তিনটি এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছে।
সামষ্টিক অর্থনীতির দিক থেকেও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে বাংলাদেশ। রাজস্ব ঘাটতি জিডিপির ৪.৪ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে বলে সতর্ক করেছে সংস্থাটি। সরকারি মূলধন ব্যয় হ্রাস পেলেও তাতে কাঙ্ক্ষিত ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাবে না বলে মত দিয়েছে তারা। বরং বাড়তি ভর্তুকি ও সুদ ব্যয়ের কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।
বিশ্বব্যাংকের নতুন পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৩.৩ শতাংশে নামতে পারে। জানুয়ারিতে এই হার ৪.১ শতাংশ হিসেবে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল। তবে আগামী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়ে ৪.৯ শতাংশে পৌঁছানোর সম্ভাবনার কথাও জানানো হয়েছে।
এছাড়া আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) নিজ নিজ পূর্বাভাসে চলতি অর্থবছরের প্রবৃদ্ধিকে যথাক্রমে ৩.৮ শতাংশ ও ৩.৯ শতাংশ হিসেবে অনুমান করেছে।
বিশ্বব্যাংক আরও সতর্ক করেছে যে, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং বৈশ্বিক বাণিজ্যনীতির অনিশ্চয়তা দেশের বিনিয়োগ পরিবেশ, রপ্তানি এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক গতিশীলতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। যদিও ব্যালান্স অব পেমেন্ট ঘাটতির হ্রাস এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে কিছুটা স্থিতিশীলতা ইতিবাচক ইঙ্গিত দিয়েছে।