Thursday, April 24, 2025
spot_imgspot_img
Homeজাতীয়বিচার বিভাগের নিয়োগে স্বচ্ছতা আনতে জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের হাতে যাচ্ছে ক্ষমতা

বিচার বিভাগের নিয়োগে স্বচ্ছতা আনতে জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের হাতে যাচ্ছে ক্ষমতা

সাবেক সরকারের শাসনামলে দেশের অধস্তন আদালতসমূহে সহায়ক কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ নিয়ে চরম অনিয়ম এবং বিতর্ক তৈরি হয়েছে। আদালতগুলোতে যেভাবে তিন হাজারেরও বেশি কর্মী নিয়োগ পেয়েছেন, তার একটি বড় অংশই এসেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলা থেকে। প্রাক্তন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক তার রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজ নির্বাচনী এলাকা কসবা-আখাউড়া থেকে একচেটিয়াভাবে এই নিয়োগগুলো সম্পন্ন করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

এমন একচেটিয়া নিয়োগে বিস্তর দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। অর্থের বিনিময়ে অযোগ্য এবং অনভিজ্ঞ ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়ার কারণে বিচারিক কার্যক্রমে নানামুখী সমস্যা দেখা দিচ্ছে। সরকারের পরিবর্তনের পর এই ‘নিয়োগ কেলেঙ্কারি’ দেখে বিস্ময়ে স্তম্ভিত উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। ফলস্বরূপ, বিচার বিভাগে নিয়োগ প্রক্রিয়া সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নিয়োগের নিয়ন্ত্রণ এখন বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।

বর্তমানে অতিরিক্ত জেলা জজ, যুগ্ম জেলা জজ এবং সিনিয়র সহকারী জজ মিলে নিয়োগ কমিটি গঠন করে প্রার্থী বাছাই করা হয় এবং তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে জেলা জজ নিয়োগ দেন। কিন্তু আইন মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপে এই প্রক্রিয়ায় জটিলতা ও দুর্নীতি বেড়েছে, যা অনেক জেলা জজের বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

নতুন খসড়া অনুযায়ী, জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন এখন থেকে নিয়োগযোগ্য প্রার্থীদের নির্বাচন করবে এবং সেই তালিকা জেলা জজদের হাতে তুলে দেবে। এতে অপ্রত্যাশিত হস্তক্ষেপ বন্ধ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের নেতৃত্বে থাকবেন সুপ্রিম কোর্টের একজন সিনিয়র বিচারপতি। আরও থাকবেন হাইকোর্ট বিভাগের দুই বিচারপতি, জনপ্রশাসন, অর্থ ও আইন সচিব, অ্যাটর্নি জেনারেলসহ ১০ সদস্য বিশিষ্ট বোর্ড। এই বোর্ড লিখিত, মৌখিক ও প্রয়োজনে ব্যবহারিক পরীক্ষার মাধ্যমে যোগ্য প্রার্থী নির্বাচন করবে এবং সেই অনুযায়ী নিয়োগ সুপারিশ করবে।

প্রস্তাবিত নিয়ম অনুযায়ী, কোনো পদ শূন্য হওয়ার এক মাসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট জেলা জজ সেই তথ্য সার্ভিস কমিশনের কাছে পাঠাবেন। এরপর বছরে এক বা একাধিকবার সার্বিক শূন্যপদ পূরণের লক্ষ্যে কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। চলমান নিয়োগ প্রক্রিয়া নতুন বিধিমালার আওতায় পুনর্গঠিত হবে, যদি এখনো লিখিত পরীক্ষা গ্রহণ না হয়ে থাকে।

এছাড়া ৫ জুলাই, খুলনার দুই গুরুত্বপূর্ণ আদালতে নিয়োগ পাওয়া ৬৬ জন কর্মীর মধ্যে ২২ জনই ছিলেন কসবা থেকে, যাদের নাম সাবেক মন্ত্রী নিজেই সুপারিশ করেছিলেন। তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়েছিলেন, তার তালিকা অনুযায়ী নিয়োগ না হলে পুরো প্রক্রিয়া বন্ধ থাকবে। একই ধারা অনুসরণ করে বিভিন্ন জেলায়ও এ ধরনের নিয়োগ সম্পন্ন হয়—যেমন সিরাজগঞ্জ, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, ফেনী ও কুমিল্লা—প্রত্যেক জায়গাতেই কসবা-আখাউড়ার প্রার্থীরা প্রাধান্য পেয়েছেন।

এই নিয়ে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরেও অসন্তোষ এবং বিভক্তি দেখা দেয়। স্থানীয় নেতারা সাবেক মন্ত্রীর প্রভাব কমাতে তার তালিকা সংক্ষিপ্ত করেন। তবুও, শেখ পরিবারের ঘনিষ্ঠদের তদবিরে আরও কিছু নিয়োগ ঘটে।

বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক মহাসচিব ও প্রাক্তন জেলা ও দায়রা জজ মো. শাহজাহান সাজু এ প্রসঙ্গে বলেন, “এই নিয়োগবিধি সংশোধনের উদ্যোগ অত্যন্ত সময়োপযোগী। বিচার বিভাগের পবিত্রতা রক্ষায় এটি অত্যাবশ্যক। যেসব নির্বাহী কর্তাব্যক্তি নিজেদের লোক নিয়োগ দিয়ে দুর্নীতি করেছেন, তার দায় পড়ে বিচারকদের ওপর। তাই এই সংস্কার বিচার বিভাগের মর্যাদা রক্ষা করবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

Most Popular

Recent Comments