২০১৩ সালের এই দিনে, সকাল ৯টার দিকে ধসে পড়ে সাভারের ভয়াবহ রানা প্লাজা, যেখানে প্রায় পাঁচ হাজার পোশাক শ্রমিক ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়েন। এই ভয়াল দুর্ঘটনায় ১,১৩৫ জনের মৃত্যু হয় এবং জীবিত উদ্ধার করা হয় ২,৪৩৮ জনকে—যা গোটা বিশ্বকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল।
ঘটনার দিনই ভবন মালিক সোহেল রানা ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে সাভার থানায় দায়ের হয় দুটি মামলা। একটি মামলা ‘অবহেলাজনিত হত্যা’ এবং অপরটি ‘ভবন নির্মাণে ত্রুটি’র অভিযোগে, ইমারত নির্মাণ আইনে।
তবে দুঃখজনকভাবে, এক দশকেরও বেশি সময় অতিক্রম করলেও নিহতদের জন্য বিচার এখনো সম্পন্ন হয়নি। মামলার অগ্রগতি আটকে আছে সাক্ষ্যগ্রহণে। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা বলছেন, সাক্ষীদের অনুপস্থিতির কারণে বিচারকাজ এগোতে পারছে না।
আদালত সূত্র জানায়, অবহেলাজনিত হত্যা মামলাটি ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে চলমান। ৫৯৪ জন সাক্ষীর মধ্যে এখন পর্যন্ত মাত্র ৯৪ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য ছিল ১৫ এপ্রিল, তবে সেদিনও সাক্ষী না আসায় তা পিছিয়ে ১৯ মে নির্ধারণ করা হয়।
অন্যদিকে, ভবন নির্মাণের ত্রুটির মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে অতিরিক্ত জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কে এম মহিউদ্দিনের আদালতে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মো. ইকবাল হোসেন হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘ভিক্টিমরাই সাক্ষ্য দিতে আসেন না, এমনকি তদন্ত কর্মকর্তারাও এখনো সাক্ষ্য দেননি। বিচারপ্রক্রিয়া বছরের পর বছর পিছিয়ে যাচ্ছে।’
দীর্ঘ এই অপেক্ষা ও বিচারহীনতার কারণে হতাশার কথা জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরাও। রানা প্লাজার একটি পোশাক কারখানায় সুপারভাইজার হিসেবে কর্মরত কবির মোল্লা বলেন, ‘চার দিন ধ্বংসস্তূপে মৃত্যুর সঙ্গে লড়েছি। এখনো চিকিৎসা নিচ্ছি। কিন্তু আজও বিচার পেলাম না, ক্ষতিপূরণও হাতে আসেনি।’
রানা প্লাজার ভয়াল স্মৃতি এখনো যেভাবে জীবিতদের হৃদয়ে রক্তাক্ত ক্ষত হয়ে আছে, বিচার না হওয়ায় তা আরও গভীরভাবে নাড়া দিচ্ছে একটি জাতিকে।