Saturday, April 26, 2025
spot_imgspot_img
Homeজাতীয়ফিরছেন তারেক রহমান: রাজনৈতিক পুনরুত্থান না কি নতুন যুগের পূর্বাভাস?

ফিরছেন তারেক রহমান: রাজনৈতিক পুনরুত্থান না কি নতুন যুগের পূর্বাভাস?

সম্প্রতি ব্রিটিশ সাপ্তাহিক ‘দ্য উইক’ একটি বিশদ কভার স্টোরি প্রকাশ করেছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানকে ঘিরে। “Destiny’s Child” শিরোনামের এই প্রতিবেদনটির বাংলা প্রতিশব্দ দাঁড়ায়—“নিয়তির সন্তান।” লেখিকা নম্রতা বিজি আহুজা তার বিশ্লেষণে তুলে ধরেছেন এক প্রবাসী রাজনীতিকের আশা-ভরসা, সংগ্রাম এবং ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের সংকল্প।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দীর্ঘ নির্বাসনের অবসান ঘটিয়ে প্রায় ১৬ বছর পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে ফিরে আসার দ্বারপ্রান্তে রয়েছেন তারেক রহমান। লন্ডন-নিবাসী এই নেতার প্রত্যাবর্তন নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে জোর আলোচনা। বিশ্লেষকদের মতে, এটি কেবল রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তন নয়—সম্ভবত একটি নতুন রাজনৈতিক যুগের সূচনা।

আওয়ামী লীগ সরকারের নিরন্তর চাপ ও রাজনৈতিক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও, ভার্চুয়াল নেতৃত্বে তারেক রহমান এখনো বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ রাখার ক্ষেত্রে সফল হয়েছেন বলে দাবি প্রতিবেদনে। দলের ভেতরে এখন তার ফিরে আসা কেন্দ্র করে এক নতুন চেতনার উন্মেষ দেখা যাচ্ছে।

তারেক রহমান রাজনীতির রন্ধ্রে রন্ধ্রে বড় হয়েছেন—কারণ তিনি দুই কিংবদন্তি রাজনৈতিক নেতা, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সন্তান। ১৯৮১ সালে সেনা অভ্যুত্থানে জিয়ার মৃত্যুর পর, খালেদা জিয়া বিএনপির হাল ধরেন এবং নব্বই দশকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন শেখ হাসিনার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে।

তারেক রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতিতে আসেন ১৯৮৮ সালে, তবে উল্লেখযোগ্যভাবে সক্রিয় হয়ে ওঠেন ২০০১ সালের নির্বাচন থেকেই, যেখানে বিএনপি বড় জয়ে সরকার গঠন করে। এরপর তিনি দলে এক গুরুত্বপূর্ণ কণ্ঠে পরিণত হন।

২০০৭ সালের রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাকে দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার করে। পরে তিনি প্যারোলে মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার অজুহাতে যুক্তরাজ্যে যান এবং সেখানেই নির্বাসিত রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়।

যদিও লন্ডনে অবস্থানকালে তিনি সরাসরি রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন না, তবে বিএনপির প্রতিটি বড় সিদ্ধান্তে তার উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। ২০০৯ সালের কাউন্সিলে তিনি সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং ২০১৬ সালে পুনর্নির্বাচিত হন। মায়ের কারাবরণের প্রেক্ষাপটে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বও নেন।

বিএনপির অভ্যন্তরীণ টানাপোড়েন এবং সরকারের পক্ষ থেকে একাধিকবার ভাঙনের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, তারেক রহমান ও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দল এখনো একটি সংগঠিত রূপে টিকে আছে।

তার উপদেষ্টাদের মতে, এবার কেবল নেতৃত্ব নয়—একটি সুগঠিত, ভিশনভিত্তিক রাজনৈতিক রূপান্তরের উদ্দেশ্য নিয়ে ফিরতে প্রস্তুত তারেক রহমান। উপদেষ্টা মাহদী আমিন জানান, “তিনি এমন একটি রাজনৈতিক পরিকাঠামো গড়তে চান, যেখানে স্বচ্ছতা, গণতন্ত্র এবং টেকসই উন্নয়ন পরস্পর-সম্পৃক্ত থাকবে।”

বিশ্বব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা ও তারেকের আরেক উপদেষ্টা ড. জিয়াউদ্দিন হায়দার বলেন, “আমরা এমন একটি সমাজ গড়তে চাই যেখানে কৃষক থেকে শুরু করে তরুণ প্রজন্ম—সবাই পাবে সমান অধিকার, সুযোগ এবং ন্যায্যতা।”

সমর্থকদের বিশ্বাস, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ‘একটি বিকল্প শক্তি’র প্রয়োজন—যে শক্তি গণতান্ত্রিক চর্চা, জবাবদিহিতা ও সামাজিক ন্যায়ের নতুন দিগন্ত খুলে দিতে সক্ষম। তবে সমালোচকেরা মনে করেন, তারেক এখনো তার অতীতের বিতর্কিত অধ্যায় থেকে পুরোপুরি বেরিয়ে আসতে পারেননি—বিশেষ করে দুর্নীতির মামলাগুলোর সুরাহা না হওয়া তাকে বড় আইনি চ্যালেঞ্জে ফেলতে পারে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. আসিফ বিন আলী বলেন, “তারেক রহমান এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। তিনি চাইলে হতে পারেন নতুন রাজনৈতিক আখ্যানের রচয়িতা, আবার ভুল পথে চললে তার পুরোনো বিতর্কিত অধ্যায়ই হতে পারে তার মূল বাধা।”

প্রতিবেদনে উপসংহারে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের রাজনীতি এখন এক জটিল, কিন্তু সম্ভাবনাময় মোড়ে এসে পৌঁছেছে। তারেক রহমানের দেশে ফেরা শুধু বিএনপির নয়—সমগ্র দেশের ভবিষ্যতের ওপর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।

এখন প্রশ্ন—তিনি কি পারবেন নিজের অতীত থেকে নিজেকে আলাদা করে একটি নতুন, ভবিষ্যতবান্ধব রাজনৈতিক ধারা চালু করতে, যেখানে জনগণের চাহিদাই হবে রাজনৈতিক কর্মসূচির মূল চালিকা শক্তি?

উত্তর সময়ই দেবে। তবে এটুকু নিশ্চিত—তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন আর কেবল গুঞ্জনের স্তরে নেই, এটি এখন জাতীয় রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

Most Popular

Recent Comments