Saturday, April 26, 2025
spot_imgspot_img
Homeআন্তর্জাতিকভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক ফের উত্তপ্ত: যুদ্ধের হুমকি, কিন্তু শান্তিই একমাত্র পথ

ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক ফের উত্তপ্ত: যুদ্ধের হুমকি, কিন্তু শান্তিই একমাত্র পথ

দক্ষিণ এশিয়ার দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্র—ভারত ও পাকিস্তান। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটিয়ে পৃথক রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর থেকেই দুই দেশের সম্পর্কে বৈরিতার ছায়া গভীর হয়েছে। সীমান্ত উত্তেজনা, একাধিক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ এবং কাশ্মীর সংকট—এই সম্পর্ককে করেছে আরও জটিল ও সংঘাতপূর্ণ।

সাম্প্রতিক সময়ে জম্মু-কাশ্মীরের একটি পর্যটনস্থলে নিরীহ মানুষের ওপর চালানো সন্ত্রাসী হামলাকে কেন্দ্র করে আবারও দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছেছে। ভারত এই হামলার জন্য সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করেছে, তাদের অভিযোগ—ইসলামাবাদ সীমান্তপারে সন্ত্রাসে মদদ দিচ্ছে। পাকিস্তান অবশ্য এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।

এই অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের মধ্যে পরিস্থিতি ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। নয়াদিল্লি এরইমধ্যে পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা বাতিল করেছে, সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে এবং সীমান্ত বন্ধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায় ইসলামাবাদও পাল্টা প্রতিক্রিয়ার কথা বলেছে।

বিশেষ করে ভারতের পানি চুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্তকে যুদ্ধ ঘোষণার মতোই আখ্যা দিয়েছে পাকিস্তান। তাদের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, যদি পানি প্রবাহ বন্ধ বা অন্য দিকে সরানো হয়, তাহলে তা হবে সরাসরি যুদ্ধের উসকানি। এ ধরনের পদক্ষেপের কড়া জবাব দিতে পাকিস্তান ‘জাতীয় শক্তির সর্বোচ্চ প্রয়োগ’ করবে বলেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

এদিকে ভারতও পিছিয়ে নেই। দেশটির গণমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে, ভারতের সামরিক তৎপরতা বেড়েছে এবং সমুদ্র ও আকাশপথে সেনা উপস্থিতি বাড়ানো হয়েছে। ভারতীয় নৌবাহিনী সাম্প্রতিককালে ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংসের পরীক্ষাও চালিয়েছে। দেশের অভ্যন্তরে যুদ্ধের পক্ষে সরব হচ্ছেন অনেকে। যুদ্ধের সম্ভাবনা নিয়ে এখন তীব্র আলোচনার কেন্দ্রে ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্ব।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং বিভিন্ন বিশ্লেষণধর্মী প্ল্যাটফর্মে দুই দেশের সামরিক শক্তির তুলনামূলক বিশ্লেষণ চলছে—কোন দেশের কত সেনা, কী অস্ত্র রয়েছে, কাদের ক্ষেপণাস্ত্র কত দূর পাল্লার ইত্যাদি নিয়ে জোর আলোচনা চলছে।

তবে কৌশলগত বিশ্লেষকরা বলছেন, এই উত্তেজনা বাস্তবিক অর্থে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে রূপ নেয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ, দুই দেশই জানে, বড় পরিসরের সংঘাত শেষ পর্যন্ত কারো জন্যই লাভজনক হবে না। উভয় দেশ পরমাণু শক্তিধর। উভয়েরই হাতে রয়েছে হাজার কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রমে সক্ষম বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র। একটি পরমাণু যুদ্ধ মানেই—প্রচুর প্রাণহানি, ভয়াবহ বাস্তুচ্যুতি, অর্থনীতির ধ্বংস এবং পুরো উপমহাদেশে মানবিক বিপর্যয়।

একটি সম্ভাব্য যুদ্ধের ভয়াবহতার চিত্র আরও ভয়াবহ করে তোলে—যেখানে বড় শহরগুলো হয়ে উঠবে পরমাণু বোমার প্রধান লক্ষ্যবস্তু। মুহূর্তেই ধ্বংস হবে কোটি কোটি মানুষের জীবনযাপন। শুধু ভারত ও পাকিস্তানই নয়, আশপাশের দেশগুলোতেও এর মারাত্মক প্রভাব পড়বে। এমনকি বিশ্ব অর্থনীতিও নড়ে উঠবে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই যুদ্ধের জয়ী কেউই হবে না—বরং দু’পক্ষই পরাজিত হবে। তাই এখন একমাত্র প্রয়োজন বিবেচনা, কূটনীতি এবং শান্তিপূর্ণ সমাধান।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

Most Popular

Recent Comments