অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বর হামলায় একদিনেই ৬০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন, আহত হয়েছেন আরও প্রায় দেড় শতাধিক। নিহতদের মধ্যে রয়েছে একই পরিবারের ১২ জন সদস্য। শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) আলজাজিরা প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই হৃদয়বিদারক তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার ভোর থেকে শুরু হয়ে রাত পর্যন্ত ইসরায়েলের টানা আক্রমণে গাজায় নিহতের সংখ্যা বাড়ছেই। গাজা সিভিল ডিফেন্স এবং স্থানীয় চিকিৎসকদের তথ্য অনুযায়ী, উত্তর গাজার জাবালিয়া এলাকায় এক পরিবারের ১২ সদস্য একই হামলায় প্রাণ হারান।
তুরস্কভিত্তিক সংবাদ সংস্থা আনাদোলুর বরাতে বলা হয়েছে, গত বছরের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত গাজায় মোট শহীদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫১ হাজার ৩৫৫ জনে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বৃহস্পতিবারের হামলায় আহত অন্তত ১৫২ জনকে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সংঘাত শুরুর পর থেকে আহতের মোট সংখ্যা এখন ১ লাখ ১৭ হাজার ২৪৮ জন। ধ্বংসস্তূপ ও রাস্তায় আটকে থাকা বহু হতাহত ব্যক্তির কাছে এখনো উদ্ধারকর্মীরা পৌঁছাতে পারেননি।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৮ মার্চ থেকে নতুন করে শুরু হওয়া ইসরায়েলি বিমান হামলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার মানুষ নিহত এবং আরও ৫ হাজার ২০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। চলমান হামলা ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে জানুয়ারিতে স্বাক্ষরিত যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে কার্যত ভঙ্গ করেছে।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলার কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ জনগণ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন এবং ভূখণ্ডটির প্রায় ৬০ শতাংশ অবকাঠামো পুরোপুরি ধ্বংস বা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এদিকে কাতারের রাজধানী দোহায় জিম্মি মুক্তি বিষয়ক আলোচনার অংশ হিসেবে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের প্রধান ডেভিড বার্নিয়া কাতারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আল-থানির সঙ্গে বৈঠক করেছেন। যদিও প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু তাকে আনুষ্ঠানিক আলোচক হিসেবে মনোনীত করেননি, তবুও তিনি আলোচনায় অংশ নেন।
ইসরায়েলি গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যমতে, এখনো আলোচনায় উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি হয়নি, যা একটি কার্যকর সমাধানের সম্ভাবনাকে অনিশ্চয়তায় ফেলে দিয়েছে।
ফিলিস্তিনি সূত্রগুলো বলছে, মিশর ও কাতারের সঙ্গে সমন্বিতভাবে একটি নতুন যুদ্ধবিরতির খসড়া পরিকল্পনা প্রস্তুত করা হচ্ছে। প্রস্তাবিত পরিকল্পনায় রয়েছে—তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি, পর্যায়ক্রমে জিম্মি মুক্তি, ইসরায়েলি বাহিনীর গাজা থেকে সম্পূর্ণ প্রত্যাহার, অবরোধ প্রত্যাহার, পুনর্গঠনের উদ্যোগ এবং পাঁচ থেকে সাত বছরের শান্তিচুক্তিতে হামাসের সম্মতি।