চলতি মে মাসের শেষ দিকে বাংলাদেশ সফরে আসছেন চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াং ওয়েনতাও। তিনি একটি ১০০ সদস্যের বিশাল ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা। প্রতিনিধি দলটি আগামী ৩১ মে ঢাকায় পৌঁছাবে এবং এই সফর মূলত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কেন্দ্রিক নানা বৈঠক ও কার্যক্রম ঘিরেই সাজানো হয়েছে।
সফরকালে প্রতিনিধি দলটি বাংলাদেশের বাণিজ্য উপদেষ্টা, সচিবসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসবে। চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গেও। সফরের মূল লক্ষ্য হবে—বাংলাদেশে বিনিয়োগ সম্ভাবনা যাচাই করা এবং চট্টগ্রামে চীনের জন্য নির্ধারিত অর্থনৈতিক অঞ্চল সরেজমিন পরিদর্শন করা। সূত্র জানায়, চীনা বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে উৎপাদন ভিত্তিক শিল্প স্থাপনে আগ্রহী, কারণ দেশটির সঙ্গে আমদানির তুলনায় রপ্তানির পরিমাণ এখনো অনেক কম।
বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বরাবরই ইতিবাচক, এবং বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে এই সম্পর্ক আরও গভীরতর হচ্ছে। চলতি বছরের মার্চে প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরকালে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ঘোষণা দেন যে, বাংলাদেশে ২১০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ, ঋণ এবং অনুদান প্রদান করা হবে। পাশাপাশি, চায়না ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোন উন্নয়নে অতিরিক্ত ৩৫ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি। এরপর অনুষ্ঠিত বিনিয়োগ সম্মেলনেও চীনা বিনিয়োগকারীদের সক্রিয় উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।
চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক প্রায় পাঁচ দশকের পুরনো, এবং এই সময়কালে আস্থার কোনো ঘাটতি দেখা যায়নি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার গুরুত্বপূর্ণ চীন সফরের মাধ্যমে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়েছে। গত মার্চে চীন সফরকালে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যেন চীনের অর্থনৈতিক অঞ্চল নিয়ে দ্রুত কাজ এগিয়ে নেয়া হয়। চীনা রাষ্ট্রদূতও জানিয়েছেন, বহু বিনিয়োগকারী ইতিমধ্যে প্রস্তুত, তারা কার্যক্রম শুরু করতে অপেক্ষা করছেন।
তবে কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই প্রতিনিধি দল বিনিয়োগের পূর্বে বিস্তারিত যাচাই-বাছাই ও খাতভিত্তিক সম্ভাবনা বিশ্লেষণ করবে। তারা শুধুমাত্র উপস্থিত হলেই বিনিয়োগ করবে না—তারা আগে সার্ভে করে দেখবে কোন খাতে কেমন লাভের সম্ভাবনা রয়েছে।
উল্লেখ্য, এই চীনা প্রতিনিধিরা মূলত দেশে সরাসরি বিনিয়োগ নয়, বরং ইকোনমিক জোনে নিজস্ব কারখানা ও উৎপাদন স্থাপনে আগ্রহী। তারা টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস শিল্প, নবায়নযোগ্য জ্বালানি (সৌর ও বায়ু বিদ্যুৎ), ইলেকট্রিক যান ও ব্যাটারি উৎপাদন, হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য সরঞ্জাম উৎপাদন খাতে বড় আকারে বিনিয়োগের চিন্তা করছে। এসব খাতেই চীন সম্ভাব্য বাণিজ্যিক সুবিধা দেখছে—যা স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারেও প্রতিযোগিতায় অবদান রাখবে।