ফারাক্কা বাঁধ থেকে একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহারের ফলে বাংলাদেশের নদ-নদীগুলো ক্রমশ শুকিয়ে যাচ্ছে। বছরের প্রায় আট মাস এসব নদী পানিশূন্য থাকে, শুধু বর্ষাকালেই কিছুটা জলপ্রবাহ দেখা যায়। এর ফলে নদীর বুকে চর জেগে উঠছে প্রতিনিয়ত। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে গত পাঁচ দশকে দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেড়েছে প্রায় ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বিশেষ করে পদ্মা নদীর পাশবর্তী ১২টি জেলায় গড় বৃষ্টিপাত আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পেয়েছে, যা দেশের কৃষিনির্ভর উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে মরুকরণের গতি বাড়িয়ে দিয়েছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট পরিচালিত এক গবেষণা অনুযায়ী, ফারাক্কা বাঁধ থেকে পানি প্রত্যাহারের ফলে দেশের উত্তর-পশ্চিম এবং দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের নদ-নদীগুলো শুধু পানিশূন্যই হয়নি, বরং পদ্মা অববাহিকায় পানির উৎস হিসেবে থাকা ৩৩,৬৮০ হেক্টর বিল, ৮৪,৪৯৮টি পুকুর এবং ৬,১০,৪৬৭ হেক্টর প্লাবনভূমি এখন পানি শুন্য হয়ে পড়েছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে কৃষিকাজ, মৎস্যচাষ এবং প্রাণিসম্পদের খাদ্য ও পানির জোগানে।
নদ-নদীর পানির ঘাটতির পাশাপাশি ভূগর্ভস্থ পানির স্তরও নেমে গেছে। রাজশাহীসহ বরেন্দ্র অঞ্চলে অনেক গভীর নলকূপেও এখন আর পানি পাওয়া যাচ্ছে না। বাংলাদেশ ওয়াটার রিসোর্স প্ল্যানিং অর্গানাইজেশন (ওয়ারপো)-এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ৭১ শতাংশ এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর মাঝারি থেকে অতি উচ্চমাত্রার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এ অঞ্চলে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের স্থাপিত ৩০০-এর বেশি গভীর নলকূপ আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে অকার্যকর হয়ে পড়েছে।
পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বলছেন, ফারাক্কায় ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহার পদ্মা নদী ও এর আশপাশের পরিবেশ ও প্রতিবেশে ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে। পদ্মার বুকে জেগে ওঠা তিন হাজারেরও বেশি চরে বসবাসরত মানুষ বছরের অধিকাংশ সময়ই টিউবওয়েল থেকে পানির জোগান পান না। এই অঞ্চলের কৃষিও এখন বিপর্যয়ের মুখে।