দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর ধারাবাহিক চাপ সৃষ্টি করে যেতে চায় দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। পাশাপাশি, সরকারকে সহযোগিতার পথও খোলা রাখবে দলটি। দলীয় নেতারা মনে করছেন, সরকার নির্বাচনকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে না এবং বিষয়টি নিয়ে উদাসীন আচরণ করছে। বিএনপি চায় ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন হোক।
এই লক্ষ্যে সরকার ও সমমনাদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। সরকারের ওপর চাপ তৈরির অংশ হিসেবে যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সঙ্গে বৈঠক করছে, যার পরিপ্রেক্ষিতে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে দলের অবস্থান তুলে ধরা হবে এবং প্রয়োজনে যুগপৎ কর্মসূচিও ঘোষণা করা হবে।
দলের কৌশল অনুযায়ী, বছরের বাকিটা সময়জুড়ে জনসম্পৃক্ত কর্মসূচির মাধ্যমে সরকারকে চাপের মুখে রাখতে চায় বিএনপি। এতে একদিকে সরকারকে বার্তা দেওয়া যাবে, অপরদিকে নেতাকর্মীদের পুনরুজ্জীবিত ও সংগঠিত করা সম্ভব হবে।
এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে দল ও অঙ্গসংগঠনগুলো কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত সভা-সমাবেশ অব্যাহত রাখবে। মে মাসেই যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল আটটি সমাবেশ করবে। এ ছাড়া যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সঙ্গে সমন্বয় করে আরও কর্মসূচি পালনের পরিকল্পনা রয়েছে। তবে সব কর্মসূচি হবে শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক।
১৬ এপ্রিল বিএনপির সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে নির্বাচন বিষয়ে আলোচনা করে। সেখানে নির্দিষ্ট সময়সূচি না পাওয়ায় তারা প্রকাশ্যে অসন্তোষ প্রকাশ করে। এরপর জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গেও বৈঠক হয়, যার প্রতিক্রিয়ায় একই অসন্তোষের ছাপ দেখা যায়।
এই প্রেক্ষাপটে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আলোচনার সারাংশ তুলে ধরেন। দলের নেতারা মনে করছেন, সরকার ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচনের ইঙ্গিত দিলেও বাস্তবে তা আরও পেছাতে পারে। উপদেষ্টাদের ভাষা ও মনোভাবেও সেই সন্দেহ তৈরি হয়েছে।
বিএনপি মনে করছে, একসময় নির্বাচন বর্জনকারী অনেক দল এখন ধীরে ধীরে কাছাকাছি অবস্থানে আসছে। তাই ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন জোরদার করতে চায় দলটি। রমজানের আগেই জামায়াতের আমিরের নির্বাচনের দাবি প্রসঙ্গে বিএনপি ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “আমাদের উদ্বেগ অমূলক নয়। সরকারপ্রধান ডিসেম্বরকে লক্ষ্য বলে জানালেও পরে অবস্থান পাল্টেছে। এরপর উপদেষ্টাদের বক্তব্যেও নির্বাচন বিলম্বের বার্তা পাওয়া যাচ্ছে। তারপরও আমরা আশা করি, নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে ডিসেম্বরেই নির্বাচন আয়োজনের উদ্যোগ নেবেন।”
অন্যদিকে, স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, “মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই আমরা দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের দাবি করছি। তা না হলে দেশ রাজনীতি ও অর্থনীতির চরম সংকটে পড়তে পারে। এখনো পর্যন্ত কোনো রোডম্যাপ বা নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা না করায় আমরা সংলাপ ও সমন্বয়ের মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধভাবে পথ এগোনোর চিন্তা করছি। আশা করি সরকার খুব শিগগিরই নির্বাচনের রূপরেখা দিয়ে জাতিকে আশ্বস্ত করবে।