রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে বিএনপির অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের হাতে পাথর ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে নিহত হন লাল চাঁদ ওরফে মো. সোহাগ। গত শুক্রবার সকাল ১০টায় তার লাশ বরগুনার সদর উপজেলার রায়ভোগ গ্রামে, মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হয়।
শনিবার সকালে রায়ভোগ গ্রামে সোহাগের স্বজন ও স্থানীয়রা ছোটবেলা থেকেই সোহাগ ঢাকায় থাকলেও গ্রামের মানুষের সঙ্গে তার নিবিড় সম্পর্ক ছিল। প্রতি ঈদ ও বিশেষ সময়ে গ্রামে এলেই গরিবদের পাশে দাঁড়াতেন, অসুস্থদের সহায়তা করতেন এবং এলাকার উন্নয়নেও ভূমিকা রাখতেন। সম্প্রতি একটি নির্মাণাধীন মসজিদের জন্য এক লাখ টাকা অনুদান দেন তিনি।
সোহাগের ছেলে সোহান কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমার বাবাকে ওরা মেরে ফেলল। এখন আমরা কোথায় যাব? কে আমাদের দেখবে? বাবা সবসময় মানুষকে সাহায্য করতেন, এখন আমাদেরই হয়তো অন্যের সহায়তায় বাঁচতে হবে।”
সোহাগের মেয়ে সোহানা বলেন, “আমি আমার বাবার খুনিদের কঠিন শাস্তি চাই। যেন আর কোনো মেয়ে বাবাকে এভাবে হারাতে না হয়। ওরা শুধু বাবাকেই মারেনি, আমাদের পুরো পরিবারকে ধ্বংস করে দিয়েছে।”
জানা গেছে, সোহাগের পিতৃভূমি বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার কাকচিড়া গ্রামে। মাত্র সাত মাস বয়সে বজ্রপাতে পিতৃহারা হন তিনি। এরপর মা আলেয়া বেগম দুই কন্যা ও ছোট ছেলে সোহাগকে নিয়ে ঢাকায় চলে আসেন। সেখানে মিটফোর্ড এলাকায় ‘মেসার্স সোহানা মেটাল’ নামে একটি দোকান চালাতেন তিনি। কেরানিগঞ্জ মডেল টাউনে স্ত্রী লাকি বেগম ও সন্তানদের নিয়ে তার বসবাস ছিল।
সোহাগের স্ত্রী জানান, দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা—টিটু, রনি কাইউম, ছোট মনির ও লম্বা মনির—তাদের কাছে মাসে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিল। চাঁদা না দেওয়ায় ঘটনার দিন সন্ত্রাসীরা দোকানে তালা ঝুলিয়ে দেয়।
সোহাগের হত্যাকাণ্ড বরগুনায় শোকের ছায়া ফেলেছে। এলাকাবাসীরা বলেন, তিনি শুধু একজন ব্যবসায়ী ছিলেন না, একজন মানবিক ও উদার মানুষও ছিলেন। তার এ মর্মান্তিক মৃত্যুতে তারা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।