রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টা ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগ বিষয়ে বিকল্প প্রস্তাব তুলে ধরেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। রোববার (১৩ জুলাই) বিকেলে সাংবাদিকদের সামনে তিনি এসব প্রস্তাব তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির হাতে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ব্যাপারে অবারিত ক্ষমতা রয়েছে, যেখানে কারও বিচার বিভাগীয় অভিজ্ঞতা না থাকলেও নাগরিক হিসেবে যোগ্যতা থাকলে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া সম্ভব। এ অবস্থায় বিএনপি চায়, আপিল বিভাগের সিনিয়র তিনজন বিচারকের মধ্য থেকে নিয়োগ বাধ্যতামূলক করা হোক। আলোচনায় আপিল বিভাগের শীর্ষ দুইজনের মধ্য থেকে রাষ্ট্রপতি যেন একজনকে মনোনীত করেন, এমন প্রস্তাবও আসে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে তিনি বলেন, জুডিশিয়ারি নির্ভরতা কমিয়ে বিকল্প প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জাতীয় ঐকমত্য গঠনের উদ্যোগ নেওয়া উচিত। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেতা, স্পিকার এবং ডেপুটি স্পিকার—এই পাঁচজনের সমন্বয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার নির্বাচন করতে পারেন। প্রয়োজনে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী তৃতীয় বৃহত্তম দলের একজন প্রতিনিধি যুক্ত করা যেতে পারে।
তিনি বলেন, যদি এসব বিকল্প প্রক্রিয়ায় ঐকমত্য না হয়, তাহলে ১৩তম সংশোধনী অনুযায়ী পুরোনো তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার কথাও ভাবা যেতে পারে। এক্ষেত্রে অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিদের মধ্যে যাদের বয়স ৭৫ বছরের কম, তাদের মধ্য থেকে একজনকে বাছাই করারও প্রস্তাব দেন তিনি।
জরুরি অবস্থা ঘোষণার প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন বলেন, সংবিধানের ১৪১ (ক) ধারায় থাকা ‘অভ্যন্তরীণ গোলযোগ’ শব্দটি অপব্যবহারের সুযোগ তৈরি করে। তাই এটি বাদ দিয়ে ‘রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা, সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি’, ‘মহামারি’ বা ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ’ যুক্ত করার প্রস্তাব এসেছে এবং এতে ঐকমত্য হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, জরুরি অবস্থা ঘোষণায় কেবল প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষর নয়, বরং মন্ত্রিসভার অনুমোদনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে এবং এতে বিরোধী দলীয় নেতাকেও যুক্ত রাখার সুপারিশ করা হয়েছে।
বিএনপির পক্ষ থেকে এসব প্রস্তাবের মূল উদ্দেশ্য, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাঠামো পুনরুদ্ধার করলেও বিচার বিভাগকে বিতর্কের বাইরে রাখা এবং সর্বজনগ্রাহ্য ও ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা।