ফেনীতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার এক বছর পার না হতেই আবারও পানিতে তলিয়ে গেছে জনপদ। মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৩৬টি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনের চার দিন পর শনিবার (১২ জুলাই) এই তথ্য জানিয়েছে ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। তবে তাদের দেরিতে প্রতিক্রিয়া এবং দায়সারা মনোভাব নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে বানভাসি মানুষ।
গত মঙ্গলবার (৮ জুলাই) টানা বর্ষণ ও ভারতের পাহাড়ি ঢলে পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলার নিম্নাঞ্চল বন্যাকবলিত হয়। এখন পানি কিছুটা কমলেও ছাগলনাইয়া, ফেনী সদর ও দাগনভূঞা উপজেলার কিছু অংশ এখনো পানির নিচে। পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে নতুন দুর্ভোগ দেখা দিচ্ছে, স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র।
পাউবোর তথ্য অনুযায়ী, পরশুরামে ১৯টি এবং ফুলগাজীতে ১৭টি জায়গায় বাঁধ ভেঙেছে। যদিও প্রথমে তারা মাত্র ২০টি ভাঙনের কথা জানিয়েছিল। স্থানীয়দের অভিযোগ, গত বছরও প্রায় একই জায়গায় বাঁধ ভেঙেছিল। প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে মেরামত করা হলেও বছর না যেতেই আবার তা ভেঙে পড়েছে। তারা পাউবোর তদারকি ও দুর্নীতিকে দায়ী করছেন বারবার এই দুর্ভোগের জন্য।
জেলা প্রশাসন সূত্র বলছে, পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলায় বাঁধ ভাঙার পর থেকেই ১১২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে এবং প্রায় সাড়ে ৯ হাজার মানুষ ৮৩টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন।
কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিভাগের প্রাথমিক হিসাবে, এবারের বন্যায় মৎস্য খাতে ক্ষতির পরিমাণ ৮ কোটি ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ফসলি জমি ৫,৫৬৪.৬১ হেক্টর আক্রান্ত হয়েছে, আর প্রাণিসম্পদ খাতে ক্ষতি হয়েছে ৬৪ লাখ ৮৮ হাজার ৭৫০ টাকা। চূড়ান্ত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ পরে জানানো হবে।
ক্ষতিগ্রস্তদের কেউ কেউ বলছেন, পরিস্থিতি প্রতিবছর একই রকম হয়—বাঁধ ভাঙে, পানি ঢোকে, প্রাণ ও সম্পদ নষ্ট হয়, তারপর প্রতিশ্রুতির আশ্বাস আসে।
কমুয়া এলাকার খামারি হারুন বলেন, “গতবার ২০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছিল, এবারও মাছ, মুরগি সব ভেসে গেছে।”
মহামায়া এলাকার ফরিদা সুলতানা জানান, “পানিতে সব আসবাব নষ্ট। আগাম সতর্কতা বা টেকসই ব্যবস্থা নেই। শুধু উজানের পানির দোহাই দিয়ে দায় সারে পাউবো।”
পরশুরামের মাসুম বলেন, “চারদিনেও কেউ এল না দেখতে। প্রতিবছর এই দুর্দশা থেকে মুক্তি চাই।”