২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে জুন—এই ছয় মাসে বাংলাদেশে নানা ধরনের সহিংসতা, নির্যাতন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় মোট ৫৮১ জন প্রাণ হারিয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ৬ হাজার ৫৭৫ জন। এসব ঘটনার মধ্যে রয়েছে বিচারবহির্ভূত হত্যা, রাজনৈতিক সংঘাত, সমাবেশে বাধা, নারী ও শিশু নির্যাতন, সীমান্ত হত্যাকাণ্ড, সংখ্যালঘু নিপীড়ন, সাংবাদিক ও শ্রমিক নিপীড়ন ইত্যাদি।
শনিবার (১২ জুলাই) বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের মানবাধিকার বিভাগ প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি জানুয়ারি-জুন-২০২৫’ শীর্ষক ছয় মাসের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনা ছিল ১৬৯টি, যেখানে নিহত হন ৮৮ জন। এর মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে মারা গেছেন ১৩ জন এবং গণপিটুনিতে ৭৫ জন নিহত হয়েছেন। একই সময়ে গণপিটুনিতে আহত হন ১৩৪ জন।
রাজনৈতিক সহিংসতার চিত্রও ভয়াবহ। ছয় মাসে সংঘটিত ৬১০টি ঘটনায় ৯২ জন নিহত এবং ৪৫৩৫ জন আহত হয়েছেন, গুলিবিদ্ধ হয়েছেন ১২০ জন। এ সহিংসতার প্রেক্ষিতে পুলিশ ৩৩,৪৯৫ জনকে গ্রেফতার করেছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও রাজনৈতিক দলগুলোর বাধায় ২৭টি সমাবেশে বিঘ্ন ঘটে, যাতে ২৪০ জন আহত ও ৩৭ জন গ্রেফতার হন।
নারী ও শিশু নির্যাতনের চিত্রও উদ্বেগজনক। ধর্ষণ, যৌতুক, পারিবারিক সহিংসতা, এসিড নিক্ষেপ ও যৌন হয়রানির ৯৭৭টি ঘটনায় ২০৬ জন নারী নিহত এবং ১৪২ জন আহত হন। অন্যদিকে, শিশু নির্যাতনের ৬৭৫টি ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে ১৩৪ জন শিশু, আহত হয়েছে ৫৪১ জন। সব মিলিয়ে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৩৪০ জন এবং আহত হয়েছেন ৬৮৩ জন।
সীমান্তে ভারতীয় বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়েছেন ১৪ জন, আহত ২১ এবং আটক হয়েছেন ২৭ জন। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতার ৩৭৭টি ঘটনায় আহত হয়েছেন ১২২ জন এবং গ্রেফতার হয়েছেন ১০ জন।
সংখ্যালঘুদের উপাসনালয় ও বসতবাড়িতে ১৫টি হামলার ঘটনায় আহত হন ২১ জন। শ্রমিকদের ওপর নির্যাতনের ২০৮টি ঘটনায় ৪৭ জন প্রাণ হারান এবং আহত হন ৭৩২ জন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ এর অধীনে ছয় মাসে ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এই পরিসংখ্যান দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির সার্বিক অবনতির চিত্র তুলে ধরেছে বলে প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে।