রংপুর নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন ও পরিবেশ উন্নয়নের লক্ষ্যে ঐতিহ্যবাহী শ্যামাসুন্দরী খাল উদ্ধার ও পুনর্গঠনে ১৪ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে সরকার। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) বিকেলে খালটি পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি জানান, প্রকল্পের আওতায় ১০ কিলোমিটার খনন (ড্রেজিং) এবং ৬৮টি পয়েন্টে ছাঁকনি (ফিল্টার) বসানো হবে, যাতে করে খালের পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখা যায় এবং বর্জ্য প্রবেশ বন্ধ করা যায়।
একসময় শহরের পানি নিষ্কাশনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ খালটি এখন দখল ও দূষণে সংকুচিত হয়ে সরু নালায় পরিণত হয়েছে। বৃষ্টিপাত হলেই শহরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
উপদেষ্টা বলেন, “খালের ওপর দুটি কৃত্রিম বাঁধ রয়েছে, যেগুলোর যৌক্তিকতা খতিয়ে দেখা হবে। প্রয়োজন হলে সেনাবাহিনীর সহায়তায় বাঁধ অপসারণ করা হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ড, জেলা প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর যৌথ উদ্যোগে শুকনা মৌসুমেই কাজ শুরু হবে।”
তিনি আরও জানান, যেসব পয়েন্ট দিয়ে খালে বর্জ্য ঢুকছে, সেগুলো বন্ধ করার পাশাপাশি স্বল্প খরচে বর্জ্য শোধন পদ্ধতি চালুর সম্ভাবনাও বিবেচনা করা হচ্ছে।
এ সময় তিনি তিস্তা নদী পুনর্গঠন ও ভাঙন প্রতিরোধ প্রকল্পের অগ্রগতির কথাও তুলে ধরেন। জানান, মাত্র দুই মাসেই অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ পাওয়া অর্থে ১৯.৫ কিলোমিটার এলাকা সংস্কার করা হয়েছে, অবশিষ্ট কাজ শুকনা মৌসুমে শেষ করা হবে।
তিস্তার স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, “স্থায়ী বাঁধের প্রয়োজনীয়তা থাকলেও পর্যাপ্ত রিসোর্স পার্সন ও সময়ের অভাবে এখনই তা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।” শরীয়তপুর, ফরিদপুর, ফেনীসহ আরও কয়েকটি জেলাতেও একই দাবি থাকায় স্বল্প সময়ে সব জায়গায় কাজ করা সরকারের পক্ষে কঠিন।
তিনি বলেন, “আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছি। সময়সীমা কম হলেও রংপুরে হাসপাতাল নির্মাণ ও তিস্তা নিয়ে কার্যকর উদ্যোগ নিয়েছি। যতদিন স্থায়ী সমাধান না হয়, ততদিন যেন এই অঞ্চলের মানুষ বন্যা, নদীভাঙন বা সেচ সংকটে না পড়ে, সেটিই আমাদের লক্ষ্য।”
পরিদর্শনের সময় উপদেষ্টা রংপুরের কাউনিয়া ও কুড়িগ্রামের রাজারহাটে তিস্তা তীরবর্তী এলাকা ঘুরে দেখেন এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।