ভারত ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে বহুল প্রতীক্ষিত একটি বাণিজ্য চুক্তি বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) স্বাক্ষরিত হয়েছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতিতে লন্ডনের বাইরে চেকার্সে দুই দেশের বাণিজ্যমন্ত্রী জোনাথন রেনল্ডস এবং পীযূষ গোয়েল আনুষ্ঠানিকভাবে চুক্তিতে সই করেন।
চুক্তি অনুসারে, হুইস্কি, ভারতীয় খাবার, মসলা এবং অন্যান্য পণ্যের ওপর শুল্ক কমানো হবে। ব্রিটেন বলেছে, এই চুক্তি ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগের পর তাদের জন্য ‘সবচেয়ে বড় ও অর্থনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ’ বাণিজ্য চুক্তি।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি একে “দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের এক ঐতিহাসিক দিন” বলে আখ্যা দিয়েছেন।
চুক্তির বাইরে আরও ৬ বিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে দুই দেশ, যার আওতায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মহাকাশ, দুগ্ধজাত পণ্যসহ বিভিন্ন খাতে সহযোগিতা বাড়ানো হবে। প্রতিরক্ষা, অভিবাসন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং স্বাস্থ্য খাতেও যৌথভাবে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে।
চুক্তি অনুযায়ী, ভারতের বাজারে ব্রিটিশ পণ্যের গড় শুল্ক ১৫% থেকে কমিয়ে ৩% করা হবে। হুইস্কি ও জিনের উপর আমদানি শুল্ক ১৫০% থেকে অর্ধেকে নামিয়ে ৭৫% করা হবে এবং তা ধাপে ধাপে কমিয়ে ১০ বছরে ৪০%-এ নামানো হবে। মোটরগাড়ির ক্ষেত্রে নির্ধারিত কোটার অধীনে ১০০% এর বেশি শুল্ক কমিয়ে ১০% করা হবে।
যুক্তরাজ্য সরকার আশা করছে, এই চুক্তির ফলে ২০৪০ সালের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বার্ষিক ২৫.৫ বিলিয়ন পাউন্ডে উন্নীত হবে এবং এতে ব্রিটিশ অর্থনীতিতে বছরে অতিরিক্ত ৫ বিলিয়ন পাউন্ড যুক্ত হবে।
ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চুক্তির আওতায় ৯৯% ভারতীয় পণ্যের রপ্তানিতে কোনো আমদানি শুল্ক থাকবে না—বিশেষ করে পোশাক, জুতা ও খাদ্যপণ্যে।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা শুরু হয়, যা তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ইইউ ত্যাগের পর বড় কূটনৈতিক লক্ষ্য হিসেবে দেখেছিলেন। ১৩ রাউন্ড আলোচনা হলেও ২০২৪ সালের নির্বাচন-পূর্ব পরিস্থিতিতে আলোচনা স্থগিত ছিল।
বর্তমানে যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী প্রায় ২০ লাখ মানুষের শিকড় ভারতে, যা এই দুই দেশের মধ্যকার ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও পারিবারিক বন্ধনের শক্ত ভিত গড়ে দিয়েছে। স্টারমার বলেন, “আমরা এই সম্পর্ককে আরও আধুনিক, উচ্চাকাঙ্ক্ষী ও দীর্ঘমেয়াদে ফলপ্রসূ করতে চাই।